পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
১২১

একদলীয় কর্ত্তৃত্বশালী সর্ব্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হইবে; কিন্তু এই অভিযোগ আমি স্বীকার করিতে পারি না। রাশিয়া, জার্ম্মানি ও ইটালীর মত যদি রাষ্ট্রে মাত্র একটি দলেরই কর্ত্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে সেই রাষ্ট্র একটি সর্ব্বগ্রাসী ও একদলীয় প্রভুত্বাধীন রাষ্ট্র হইতে পারে সন্দেহ নাই। কিন্তু আমাদের দেশে অন্যান্য দলগুলিকে নিষিদ্ধ ও ক্ষমতাচ্যুত করার কোন যুক্তি নাই। আমাদের কংগ্রেস “নাৎসী দলের” মত “একনায়ক-নীতি’র উপর প্রতিষ্ঠিত হইবে না; কংগ্রেসের ভিত্তি হইবে সম্পূর্ণরূপে গণতান্ত্রিক। কংগ্রেসে একাধিক দল ও গণতান্ত্রিক ভিত্তি থাকার ফলে ভবিষ্যৎ ভারতীয় রাষ্ট্র একটি সর্ব্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হইতে পারিবে না। অধিকন্তু গণতান্ত্রিক ভিত্তির উপর কংগ্রেস সংগঠন প্রতিষ্ঠিত থাকায় এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাইবে যে, উপর হইতে নেতাদিগকে জনগণের উপর চাপাইয়া দেওয়া যাইবে না; জননেতারা নিচ হইতেই নির্ব্বাচিত হইবেন।”

 কংগ্রেসকে একটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই সুভাষচন্দ্রের লক্ষ্য ছিল। মহাত্মা গান্ধীর সার্ব্বভৌম নেতৃত্বেই কংগ্রেসের কার্য্যক্রম নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হইয়া আসিতেছে। সুভাষচন্দ্র এই একনায়কত্বের ঘোর বিরোধী ছিলেন। জাতীয় আন্দোলনে যেমন কংগ্রেস স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন সংগ্রামশীল দল বা প্রতিষ্ঠানের মিলন-ক্ষেত্র স্বাধীনভারতেও কংগ্রেস জাতীয় পুনর্গঠন কার্য্যে প্রগতিপন্থী সকল দলের মিলনক্ষেত্র হইবে সুভাষচন্দ্রের ইহাই ছিল অভিমত। কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলের উপর গান্ধীবাদীদের তেমন স্নেহদৃষ্টি ছিল না; কিন্তু, সুভাষচন্দ্র সমাজতন্ত্রীদলের প্রয়োজনও স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে স্বীকার করিয়া জাতীয় সংগ্রামে এই দলের সহযোগিতা ও সহায়তা কামনা করেন। কংগ্রেসের বাহিরেও যে সব সামাজ্যবাদবিরোধী দল বা প্রতিষ্ঠান আছে, দলগত বিভেদ ভুলিয়া, মত ও পথের চুলচেরা বিচারে কালক্ষেপ না