পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

দেশকে আমি জানি না, সেখানে আমার জোর খাট্‌বে না। আমি বাঙালী—বাঙালাকে জানি—বাঙালার প্রয়োজন অসীম। সেই জন্য তোমাকে যদি আহ্বান করি, স্বীকার কর্তে হবে। এখানে তুমি আমাদের অতিথি ও বন্ধু। আমাদের দেখে আমাদের কার্যভার যদি লাঘব কর্তে পার, কর। অবসর হ’লে আসতে যেতে হবে।

 দেশে যারা অপমানিত তাদের সন্মান দেবার আয়োজন করেছি এখানে। এখানকার হাওয়াতে এখানকার ছেলে মেয়েদের যে আনন্দ, তাতে তাদের দাবী আছে, এই জন্য তারা জন্মেছে। তা নইলে কেন ফুল ফোটে, দিনান্তে কেন পাখী ডাকে, যদি তারা ক্লাস ঘরে ঢুকে দাগ কাটা Passage মুখস্থ করে জীবনের সুন্দর সময় নষ্ট করে। কি দুর্ভাগ্যে মানুষ সৌন্দর্য্যবোধ থেকে বঞ্চিত থাকবে। শিক্ষাটা জীবনের সংগে জড়িত। শিক্ষাকে যারা বিচ্ছিন্ন করে রাখে, তারা তাকে পীড়িত করে, মানুষের মনকে তারা কেটে কেটে বাঁচাবার চেষ্টা করে। এখানে শিক্ষাকে সমগ্র জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে আহ্বান করেছি—মুক্তি ও আনন্দের স্বাদ দিতে চেষ্টা করেছি। কাজ যা করবার সম্পূর্ণ হয় নি। রাষ্ট্রীয় দিক থেকে তুমি আমার কর্মের পরিচয় নিয়ে যদি তাকে স্বীকার কর্তে পার, সুখী হব।”

 কবিগুরুর সম্বর্দ্ধনার উত্তরে সুভাষচন্দ্র বলেন—“আপনার যে অখণ্ড সাধনা, সেটা সাধারণ মানুষ বা সাধারণ ভারতবাসী যে সহজে উপলব্ধি করবে এটা আশা করা অন্যায়। আমিও সেই সাধারণের একজন। সুতরাং আমি যে আপনার অখণ্ড সাধনা, মহত্ত্ব ও গৌরব উপলদ্ধি কর্তে পারব, সে দুরাকাঙ্ক্ষা আমি করি না, সে উপলব্ধি একদিনে আসে না। সে উপলব্ধি হচ্ছে ক্রমিক এবং সারা জীবনব্যাপী। তবে আমার মনে হয় যদি আমরা চলার পথে চল্‌তে থাকি তা’হলে সে উপলব্ধি ক্রমশঃ প্রসারলাভ কর্‌বে।