পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
১৩১

 মধ্যে মধ্যে একথা উঠে এবং আমাদের মধ্যে আলোচিত হয়, আপনি উপস্থিত না থাকলে আপনার সাধনার কি হবে। আমি বল্‌তে চাই—কোন বস্তু বা সাধনা মরতে পারে না, যতদিন তার সার্থকতা আছে। যে সত্য ও সাধনা নিয়ে আপনার সমস্ত জীবন দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেদিন ভারতবর্ষের প্রত্যেক নর-নারীর হৃদয়ে সেটা প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন শান্তিনিকেতন বাঁচুক বা মরুক তাতে কিছু আসবে যাবে না। যতদিন পর্য্যন্ত সে সত্য ও সাধনা জাতির প্রাণের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্য্যন্ত আপনার শান্তিনিকেতনের ও শ্রীনিকেতনের সার্থকতা ও প্রয়োজনীয়তা থাকবেই থাকবে। শুধু তাই নয়, এ রকম সাধনা ভারতের দিকে দিকে স্থানে স্থানে গড়ে উঠবে।

 আমরা, যারা রাষ্ট্রীয় জীবনে বেশী সময় ও শক্তি ব্যয় করি, আমরা মর্মে মর্মে আমাদের অন্তরের দৈন্য অনুভব করি। প্রাণের দিক দিয়ে যে সম্পদ না পেলে মানুষ বা জাতি বড় হতে পারে না, সেই সম্পদ্—সেই প্রেরণা আমরা চাই, কারণ, আমরা জানি—সেই প্রেরণা, সত্যের সেই আভাস যদি প্রাণের মধ্যে পাই তাহলে আমাদের কর্মজীবনের ও বহির্জীবনের সাধনা সাফল্যমণ্ডিত ও সার্থক হবে। আপনার কাছ থেকে সে প্রেরণা আমরা চাই।

 আমরা হয়ত আজ রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা কর্‌ছি; কিন্তু আমাদের আদর্শ বড়। আমরা চাই মানুষের ও জাতির পরিপূর্ণ জীবন, আমরা চাই সব দিক দিয়ে আমাদের অখণ্ড জাতি সত্যে প্রতিষ্ঠিত হউক। এই যাত্রার পথে, এই সাধনার পথে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা একটি সোপান মাত্র। বাণীর বা সাহিত্যের সাধনায় আপনার চেষ্টা পর্য্যবসিত হয় নাই—শুধু ভগবানের উপাসনায় আপনার সাধনা পর্য্যবসিত হয় নাই। অন্তরের আদর্শকে আপনি বহির্জীবনে মূর্ত্ত কর্তে চেষ্টা করেছেন। এইটুকু আপনার চরণে নিবেদন কর্তে চাই—এই আদর্শ আমাদেরও