পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৵৹

দাঁড়াইয়া। দক্ষিণ পার্শ্বে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন। সম্মুখে স্বেচ্ছাসেবকেরা ‘মার্চ’ করিয়া চলিয়াছে। সকলের পরিধানে খাকী খদ্দরের সামরিক পরিচ্ছদ—পায়ে সামরিক বুট। আকারে-প্রকারে, গঠন-প্রকরণে, শিক্ষায় ও সজ্জায়, কায়দায় ও ভঙ্গিতে সকলই পূর্ণাঙ্গ সামরিক বাহিনীর সমতুল্য। দলের পর দল নিখুঁত পদক্ষেপে চলিয়াছে। সমরবাদ্য তালে তালে বাজিতেছে। পদাতিক বাহিনী চলিয়া গেল—অশ্বারোহী বাহিনী চলিল। অশ্বারোহী বাহিনীর পরে মোটর-সাইকেল বাহিনী চলিল। কোন পরাধীন দেশে জাতীয় পতাকাতলে এত বিরাট, এত নিখুঁত এবং অপূর্ব্ব সামরিক কুচ হইয়াছে কিনা সন্দেহ। আড়ম্বর, উদ্দীপনা ও সংগঠনে ইহা ভারতের ইতিহাসে অতুলনীয়।

 সেইদিন পণ্ডিত মতিলালের বামপার্শ্বে দাঁড়াইয়া এক বলিষ্ঠদেহ, উন্নতকায় সৌম্যদর্শন যুবকও স্বেচ্ছাসেবকদের সামরিক অভিবাদন গ্রহণ করিয়াছিলেন। এই যুবক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অধিনায়ক। এই অপূর্ব্ব শোভাযাত্রা, বিপুল সংগঠন, সামরিক শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্ত্তিতার মূলে ছিল তাঁহার অক্লান্ত চেষ্টা, অদম্য উৎসাহ ও অদ্ভুত কর্ম্মক্ষমতা। এই যুবকের আপাদমস্তক সামরিক বেশভূষায় আচ্ছাদিত ছিল। তাঁহার সেদিনের সেই সমরনায়কের বেশ, তেজোব্যঞ্জক রূপ বাঙ্গালার তরুণের মানসপটে আপন গর্ব্ব-গৌরবে, আপনার মহিমায় আজিও অপরিম্লান ভাবে অঙ্কিত রহিয়াছে। হয়ত সেদিন সমর-শোভাযাত্রা পরিদর্শনকালে সেই যুবকের মানস-নয়নে এক অনুপম স্বপ্নচ্ছবি ভাসিয়া উঠিয়াছিল। হয়ত তিনি ভাবিতেছিলেন, একদিন আসিবে যেদিন এমনিভাবে জাতীয় পতাকাতলে সহস্র সহস্র ভারতবাসী মুক্তিফৌজ গঠন করিবে—আয়র্ল্যাণ্ডের মত ভারতের ও জাতীয় বাহিনী গড়িয়া উঠিবে। জাতিধর্ম্মনির্ব্বিশেষে স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মাহুতিদানের জন্য সকলে যোদ্ধৃবেশ ধারণ করিবে।