পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৵৹

 সেদিন কেহ ভাবে নাই যে এই যুবকের স্বপ্ন একদিন বাস্তবে মহনীয় রূপ পরিগ্রহ করিবে—তাঁহারই সংগঠনের যাদুমন্ত্রবলে চালিত হইয়া লক্ষ লক্ষ ভারতীয় তাঁহারই নেতৃত্বে স্বদেশের হৃত স্বাধীনতার পুনরুদ্ধারকল্পে জাতীয় পতাকাতলে অস্ত্র ধারণ করিবে—সেদিন কংগ্রেসের অধিবেশন সংশ্লিষ্ট শোভাযাত্রা ও স্বেচ্ছাসেবক-বাহিনীর আয়োজনে যে মহতী সম্ভাবনার অঙ্কুরোদ্গম হইয়াছিল তাহাই একদিন পত্র-পুষ্প-সুশোভিত হইয়া মহা-মহীরুহে পরিণত হইবে। উত্তরকালে এই যুবক ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোনের ইতিহাসে সম্পূর্ণ এক অভিনব অধ্যায় রচনা করিয়াছেন। ইনিই আজাদ হিন্দ্ ফৌজের সর্ব্বাধিনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। যে সংগঠনশক্তি আজ সমগ্র বিশ্বে বিস্ময়ের সৃষ্টি করিয়াছে তাহার অঙ্কুর আমরা দেখিতে পাই ১৯২৮ সালের কলিকাতা কংগ্রেসের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর গঠনে ও শোভাযাত্রায়। কলিকাতায় স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ ও শিক্ষাদানের কাজে তাঁহার যে সংগঠনশক্তি ও কর্ম্মক্ষমতার পরিচয় পাওয়া গিয়াছিল, কালক্রমে তাহাই পূর্ণ বিকশিত হইয়া তাঁহাকে আজাদ হিন্দ্ ফৌজের সংগঠক-নেতা ও রণদক্ষ সর্ব্বাধিনায়ক করিয়া তুলিয়াছে। সেদিনের সমর শোভাযাত্রা অনেকেরই ঈর্ষ্যা ও বিদ্রূপের কারণ হইয়াছিল। অনেকেই তাঁহার প্রতি ব্যঙ্গ ও কটূক্তি করিতে ছাড়ে নাই। শত শত বৎসরের পরপদানত, শৃঙ্খলিত, নিরস্ত্র ও নিঃসহায়, মহাত্মা গান্ধীর অহিংসামন্ত্রে দীক্ষিত ভারতবাসী যে সশস্ত্র সৈন্য বাহিনী গঠন করিয়া প্রত্যক্ষ সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইতে পারে ইহা সেদিন স্বপ্নেরও অগোচর ছিল।

 সেদিন সুভাষচন্দ্রের অন্তরে চিরজ্বলন্ত বহ্নির এই অভূতপূর্ব্ব প্রকাশকে ক্ষণস্থায়ী আলেয়ার দীপ্তি ভাবিয়া প্রবীণের দল অবিশ্বাস ও শ্লেষের হাসি হাসিয়াছিলেন। অহিংসামন্ত্রে দীক্ষিত কংগ্রেসের অধিবেশনে অনুষ্ঠিত এই রীতিমত সহিংস সামরিক কুচকাওয়াজকে ভাবালুতাপ্রসূত অবাস্তব