পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি করিতেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা, যেহেতু বর্ত্তমান কংগ্রেস হাই কম্যাণ্ড ভিন্নমতাবলম্বী কংগ্রেস কর্মীদের প্রতি আপোষহীন মনোভাবের পরিচয় দিতেছেন এবং তাঁহারা যুগোপযোগী কর্মপন্থা অনুসরণ করিতে পারিতেছেন না তাহাতে আজ হউক কাল হউক এইরূপ আভ্যন্তরিক বিভেদ ও গোলযোগ অনিবার্য্য। উচ্চমণ্ডলের নিকট সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করিলে আজিকার এই গোলযোগ ও বিচ্ছেদ এড়ানো যায়, কিন্তু আত্মসমর্পণ করিয়া এই অবশ্যম্ভাবী ভেদসৃষ্টি স্থগিত রাখিলে আমাদের কি উপকার হইবে? যে অকল্যাণ একদিন আসিবেই তাহাকে কেবল আজিকার মত সাময়িকভাবে স্থগিত রাখিয়া কি হইবে? আমরা অতি শীঘ্র বহির্জাগতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হইতেছি। বহির্জাগতিক সঙ্কট দেখা দিলে সে সময়ে অন্তর্বিরোধ নিরতিশয় ক্ষতিকর হইত। তাহার চেয়ে ইহাই বরং সমধিক বাঞ্ছনীয় যে, আমরা অন্তর্গোলযোগের সম্মুখীন হইয়া বহির্জাগতিক সঙ্কট আসিবার পূর্বেই এই গোলযোগ কাটাইয়া উঠিব ও পূর্বাপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হইব।

 যদি বলি রাজনৈতিক অগ্রগতির পক্ষে কোন কোন সময় বিচ্ছেদের প্রয়োজন হয় তাহা হইলে কিছু মারাত্মক ভুল করা হইবে না। ১৯১৮ সালে নরমপন্থীদের বিচ্ছেদ, ১৯২০ সালে অসহযোগের বিরুদ্ধবাদীদের বিচ্ছেদ কেবল অবিমিশ্র অকল্যাণই ডাকিয়া আনে নাই। পক্ষান্তরে, ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতির পক্ষে উহা অবশ্যম্ভাবী ও প্রয়োজন ছিল। বৈদেশিক ইতিহাসেও এইরূপ দৃষ্টান্তের অভাব হইবে না। ১৯০৩ সালে রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির বিচ্ছেদ না হইলে বলশেভিক পাটির উদ্ভব ও সমৃদ্ধিলাভ কখনই হইত না। অতএব, আমি আমার দেশবাসীকে অনুরোধ করিব, ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ যে বিচ্ছেদ সৃষ্টির জন্য দায়ী হইতে পারে তাহার সম্বন্ধে তাঁহারা যেন অগভীরভাবে চিন্তা না করেন।