পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
১৮৭

 ২। কংগ্রেসের এই বিবর্ত্তন কিভাবে ঘটে? ইহার মূলে কোন নিয়ম কাজ করিতেছে? ইহার ব্যাখ্যায় অনেক মতবাদের অবতারণা করা যায়, কিন্তু আমার নিকট হেগেলীয় দ্বন্দ্ববাদই সর্ব্বাপেক্ষা সমীচীন ও বস্তুনিষ্ঠ বলিয়া মনে হয়।

 প্রগতির পথ সরল রৈখিক নয়, ইহার প্রকৃতিও সর্ব্বদা শান্তিপূর্ণ থাকে না। অনেক সময় বিরোধের মধ্য দিয়াই প্রগতির সম্ভব হয়।

 ৩। সঙ্গতি (Thesis) ও অসঙ্গতি (Antithesis)র দ্বন্দ্ব হইতেই সমন্বয়ের (Synthesis) জন্ম হয়। বিবর্ত্তনের নবপর্য্যায়ে এই সমম্বয়ই আবার ‘সঙ্গতি’ রূপে দেখা দেয়। এই ‘সঙ্গতি’ পুনরায় ‘অসঙ্গতি’র সৃষ্টি করে—এবং উভয়ের দ্বন্দ্বের ফলে পুনরায় “সমন্বয়” ঘটে। প্রগতির চক্র এইরূপেই আবর্ত্তিত হইয়া চলিতে থাকে।

 ৪। যাহারা সময়ে অসময়ে ঐক্যের কথা বলে, এবং সর্ব অবস্থায়ই ও যে কোন মূল্যে ঐক্য বজায় রাখিবার জন্য আবেদন করে, তাহারা বিবর্ত্তনের এই মূল সূত্রই বিস্মৃত হয়। প্রকৃত ঐক্য ও মিথ্যা ঐক্য সক্রিয়তার ঐক্য ও নিষ্ক্রিয়তার ঐক্য—যে ঐক্যের ফল প্রগতি ও যে ঐক্যের ফল নিশ্চেষ্টতা—ইহাদের প্রভেদ বিচার করিতে হইবে। যাহারা চলার বেগ হারাইয়াছে, বৈপ্লবিক প্রেরণা যাহাদের নাই, সর্বাবস্থায় ও যে কোন মূল্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার সহজ বুলি আজিকার দিনে তাহাদেরই মুখে শোভা পায়। এইরূপ ঐক্যের মোহে পড়িয়া আমরা পথভ্রষ্ট হইব না।

 ৫। প্রত্যেক জীবন্ত ও গতিশীল আন্দোলনের মধ্যে বামপন্থী চিন্তাধারা গুপ্ত আছে—ইহাকে গুপ্ত “অসঙ্গতি”ও বলিতে পারি। সময় পূর্ণ হইলে, এই গুপ্ত বামপক্ষ আত্মপ্রকাশ করে ও ইহার মধ্য দিয়াই ক্রমবিকাশের ধারা চলিতে থাকে। কোন বিশেষ অবস্থায় বামপক্ষ কীরূপে সর্বাপেক্ষা ফলপ্রসূ কর্মপন্থা অনুসরণ করিবে, তাহা নির্ণয় করিতে হইলে রাজনৈতিক ও কখন কখনও দার্শনিক অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োজন। সময়