পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

লাভ করিতে ছুটিয়াছে। ইউরােপের সংস্কৃতি সর্ব্বপ্রথম বাঙ্‌লাদেশেরই অন্তঃকরণে গভীর আলােড়ন আনে। বুদ্ধির সার্ব্বজনীনতা, দৃষ্টির ব্যাপকতা, বৃহত্তর জগত ও মানব সমাজের নবতর উন্নতি ও অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষণিকায় মানবধর্ম্মের উপলব্ধি সর্ব্বপ্রথম বাঙ্‌লাদেশেই ঘটে। মহামনীষী রাজা রামমােহন রায় ভারতের এই নবজাগরণের পথিকৃৎ। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যজ্ঞেরও সর্ব্বপ্রথম পুরােহিত ভারতপথিক রামমােহন। রামমােহনের যুগ হইতে বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্য দিয়া ভারতের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ক্রমশঃ প্রবল হইয়াই বিস্তারলাভ করিয়া চলিয়াছে। পাশ্চাত্তের জ্ঞানবিজ্ঞানের ভাণ্ডার হইতে যুগােচিত শিক্ষা ও চিন্তাধারা আহরণ করিয়া রামমােহন ভারতবর্ষের সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থায় নূতন পরিবর্ত্তন সাধন করেন। তাঁহার নেতৃত্বে যে ব্রাহ্ম আন্দোলন গড়িয়া উঠে তাহার ধর্ম্ম-সম্বন্ধীয় মতবাদ যাহাই হউক না কেন ভারতবাসীর আত্ম-জাগরণের সেই প্রথম স্ফুরণ, ভারতের রাজনৈতিক চেতনাবােধের উহাই সর্ব্বপ্রথম অভিব্যক্তি। ইহা আদৌ বিস্ময়কর নহে যে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রথম যুগের নেতৃবর্গের অধিকাংশই এই ব্রাহ্ম আন্দোলনের প্রভাবে বর্দ্ধিত।

 রামমােহনের পরে ‘বন্দেমাতরম্’ মন্ত্রের উদ্‌গাতা ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র ভারতের জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জাতির সম্মুখে স্পষ্টরূপে তুলিয়া ধরেন। বঙ্কিমচন্দ্র ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম স্রষ্টা। ভারতের জাতীয় মন্ত্র ‘বন্দেমাতরম্’ সঙ্গীত এই মহাপুরুষের অক্ষয় অবদানের কথা স্মরণ করাইয়া দেয়।

 তখনকার যুগের কংগ্রেসী প্রবীণ নেতাদের আবেদন নিবেদনই ছিল জাতীয় আন্দোলনের মূল নীতি। বঙ্কিমচন্দ্রের শিক্ষা ও প্রচারের ফলেই সেযুগের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক চিন্তাধারার মােড় ফিরিয়া যায়। তাঁহারা বুঝিল ভিক্ষানীতির দ্বারা দেশের মূল সমস্যার সমাধান হইতে