পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৮
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

 এখানে অপ্রাসঙ্গিক হইলেও অন্যান্য দেশ ও জাতির জীবনের এবম্বিধ সংকটময় অবস্থার সহিত আমাদের অবস্থার তুলনামূলক বিচার করিতে চাই। ১৯১৭ সালের অক্টোবর মাসে রুশ বিপ্লবের যখন সূত্রপাত হয় তখন কাহারও মনেই কোন পরিষ্কার ধারণা ছিল না, কি ভাবে এই বিপ্লবকে সন্তোষজনক পরিণতির দিকে পরিচালিত করিতে হইবে। বলশেভিকদের অনেকেই অন্যান্য দলের সহিত কোয়ালিশন করার কথা ভাবিতেছিল। কিন্তু লেনিন কোয়ালিশনের সুখস্বপ্নকে বিচূর্ণ করিয়া দিয়া ধ্বনি তুলিলেন—‘সমস্ত ক্ষমতা সােভিয়েটের হস্তে অর্পিবে।’ সমস্ত রুশজাতি যখন সন্দেহ ও সংশয়ে দুলিতেছিল, সেই সময়ে লেনিনের এই সময়ােচিত নেতৃত্ব না হইলে রাশিয়ার ইতিহাসে কোন্ পরিবর্ত্তন দেখা দিত কে জানে? লেনিনের দ্রষ্টাসুলভ ও নির্ভুল অন্তর্দৃষ্টি রাশিয়াকে দারুণ বিপদের হাত হইতে রক্ষা করিয়াছে নতুবা এই সে দিন স্পেনের যে শােচনীয় অবস্থা হইয়াছিল রাশিয়ার অবস্থাও হইত তদ্রূপ।

 এখন আমি আর একটি বিরুদ্ধ ঘটনার উল্লেখ করিব। ১৯২২ সালে ইটালীর অবস্থা সমাজতন্ত্রবাদের পক্ষে সর্বাপেক্ষা অনুকুল ও আশাপ্রদ ছিল। অভাব ছিল কেবল লেনিনের ন্যায় একজন বিচক্ষণ নেতার। ইটালীর এই যুগসন্ধিক্ষণে উপযুক্ত নেতার আবির্ভার হইল না, ফলে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই সুযােগ হাতছাড়া হইয়া গেল। ফ্যাসিষ্ট নেতা বেনিটো মুসােলিনী এই সুযােগ গ্রহণ করিলেন। তাঁহার রোম অভিযান ও রাষ্ট্রশক্তি করায়ত্ত করার ফলে ইটালীর ইতিহাসে এক অপ্রত্যাশিত সম্পূর্ণ নূতন পরিবর্ত্তন ঘটিয়া গেল। সমাজতন্ত্রের পরিবর্ত্তে ফ্যাসিষ্টতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হইল। ইতালীর নেতাদের মনে সংশয় ও সন্দেহ ঢুকিয়াছিল বলিয়াই তাঁহারা অকৃত-কার্য্য হইলেন; অপরপক্ষে, মুসােলিনীর এমন একটি প্রধান গুণ ছিল যাহা তাঁহাকে ত রক্ষা করিলই অধিকন্তু তাঁহার কণ্ঠে জয়মাল্য পরাইয়া দিল।