পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩২
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

গান্ধীজির ব্যক্তিত্বের চৌম্বক প্রভাবে পড়িয়াই ভারতের মুক্তি সংগ্রামে দীক্ষা গ্রহণ করিয়াছেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের বেলায় এই কথা প্রযোজ্য নয়। বিভিন্ন পরিবেশ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনে দীক্ষার কারণ। মহাত্মাগান্ধী যখন সক্রিয়ভাবে কংগ্রেসে যোগদান করেন নাই, ১৯১৫-১৯১৯ সনের সেই সময়েই তাঁহার জীবনের উদ্দেশ্য ও কর্ত্তব্য নির্দিষ্ট হইয়া যায়। পিতৃদেবের সন্তোষ বিধানের জন্যই কেবল তিনি আই-সি-এস পরীক্ষা দিয়াছিলেন। “কোন প্রকার আপোষ না করিয়া বৈদেশিক শাসনের উচ্ছেদ ও ভারতের মুক্তি সাধন”—তাঁহার জীবনের এই লক্ষ্য যৌবনারম্ভেই নির্দিষ্ট হইয়া যায়। ১৯১৯ সালে অমৃতসর কংগ্রেসে গান্ধীজি যখন ব্রিটিশের সহিত সহযোগিতার জন্য আবেদন জানাইতেছিলেন, তখনই সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশ সরকারের সহিত সহযোগিতা বর্জন করিয়া ভবিষ্যৎ জীবনের সংগ্রামপন্থার কল্পনা করিতেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীই অন্যান্য জননায়কদের রাজনৈতিক জীবনের দীক্ষাগুরু। তাই, সম্পূর্ণভাবে গান্ধীজির মত ও পথ অনুমোদন ও অনুসরণ তাঁহাদের পক্ষে স্বাভাবিক। কিন্তু সুভাষচন্দ্র রাজনীতিতে যোগদান করিয়াছেন—জীবন দেবতার দুর্বার আহ্বানে। অতএব রাজনৈতিক জীবনের সর্বক্ষণে সুভাষচন্দ্র নিজের সচেতন আদর্শ, প্রত্যয়, বিচারবুদ্ধি অনুসরণ করিয়াই চলিয়াছেন— ইহাই স্বাভাবিক। এই কারণেই বহুক্ষেত্রে সুভাষচন্দ্র গান্ধীজির মত ও পথ স্বীকার করিয়া লইতে পারেন নাই। তাঁহার রাষ্ট্রিক জীবনের ভাবনা ও প্রেরণা গান্ধীজির আদর্শ হইতে মূলতঃ পৃথক। এই দুই রাষ্ট্রবীরের রাজনীতি ও কর্মজীবনের উৎস বিভিন্ন বলিয়াই ভারতের বিভিন্ন সমস্যায় মৌলিক বিষয়ে ইঁহারা কেহই স্বকীয় আত্মপ্রত্যয়, মূলনীতি ও বিশ্বাস ত্যাগ করিতে পারেন নাই। গান্ধীজিকে সুভাষচন্দ্র শ্রদ্ধার মহাসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন বটে, কিন্তু নিজের বিবেক ও বিশ্বাসকে তিনি মহত্তর ও উচ্চতর আসনে স্থাপিত করিয়াছেন।