পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

ব্যাপক অহিংস অসহযোগ আন্দোলন কৌশল গ্রহণ করিবার জন্যই দেশবাসীকে নির্দ্দেশ দিয়াছেন। ব্লকগঠনের পরও তিনি ব্যাপক অহিংস গণ আন্দোলন শুরু করিবার জন্যই আহ্বান জানাইয়াছেন। ব্লক গঠনের পরে সুভাষচন্দ্র ভারতের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণ করিয়া আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করিবার আয়োজন ও দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করিলেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি প্রথমতঃ স্থানীয়ভাবে গণ আন্দোলন শুরু করিতে মনস্থ করিলেন। ফরোয়ার্ড ব্লকের কার্য্যকলাপে বাধা দিবার উদ্দেশ্যে ও সুভাষচন্দ্রের ক্রমবর্দ্ধমান প্রভাব খর্ব্ব করিবার জন্য নিখিল ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন। প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সম্মতি ও অনুমোন ব্যতীত কংগ্রেস কর্মীরা আইন অমান্য আন্দোলন আরম্ভ করিতে পারিবে না ইহাই এই প্রস্তাবের মর্ম। সমস্ত বামপন্থীকে বিতাড়িত করিয়া কংগ্রেসকে একটি একনায়কাধীন একদলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য। কংগ্রেস হইতে দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধবাদী সমস্ত কংগ্রেস কর্মিগণকে বিতাড়ন করা ইহার উদ্দেশ্য। প্রত্যেক কংগ্রেসকর্মীরই ব্যক্তিগতভাবে সত্যাগ্রহ আন্দোলন আরম্ভ করিবার অধিকার এই পর্য্যন্ত স্বীকৃত হইয়া আসিতেছে। এই প্রস্তাবে কংগ্রেস কর্মীকে সেই ব্যক্তিগত অধিকার হইতেও বঞ্চিত করা হইল। কংগ্রেসকর্মীদের নিয়মতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করায় ও তাহাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করার প্রচেষ্টায় সুভাষচন্দ্র প্রবল প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন। এই প্রস্তাবকে তিনি ফ্যাসিস্ত মনোভাব সুলভ কার্য্য বলিয়া অভিহিত করেন ও ইহার বিরুদ্ধে এক সর্বভারতীয় প্রতিবাদ দিবসের আয়োজন করেন। সুভাষচন্দ্রের এই প্রতিবাদকার্যের জন্য মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে তাঁহাকে কংগ্রেস হইতে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু কংগ্রেসের এই কার্য্যের ফলে সুভাষচন্দ্রের প্রভাব খর্ব না হইয়া উত্তরোত্তর বাড়িয়াই চলে। সুভাষ বিতাড়নের ব্যবস্থায় কংগ্রেসের যে উদ্দেশ্য ছিল, তাহা সফল না হইয়া বিফলই হইল।