পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৪৭

 ইতিমধ্যে ১৯৩৯ এর ৩রা সেপ্টেম্বর মহাযুদ্ধ ঘোষিত হইল—এই বিশ্ব পরিস্থিতির সম্মুখীন হইবার জন্য গান্ধীজি শাসিত কংগ্রেস মোটেই প্রস্তুত থাকে নাই। যুদ্ধ সমস্যায় কংগ্রেসের পররাষ্ট্রনীতির শোচনীয় অভাবের পরিচয় পাওয়া গেল—বিভিন্ন নেতা বিভিন্ন সুরে কথা বলিতে লাগিলেন। ব্রিটিশগভর্ণমেণ্ট ভারতকে যুদ্ধরত দেশ বলিয়া ঘোষণা করিলেন। কংগ্রেস কিন্তু এই সমস্যায় কোন স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারিল না— কংগ্রেস হাইকমাণ্ড যুদ্ধের বিভিন্ন সমস্যায় সরকারের সহিত একটা বোঝাপড়া করিবার আশায় দীর্ঘকাল পণ্ডিতসুলভ তর্কে প্রবৃত্ত রহিল, এই বিশ্বসঙ্কটে দেশকে কোন সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপন্থা দিয়া পরিচালিত করিতে পারিল না। কংগ্রেসের উপর যে বিরাট দায়িত্ব পড়িল, সেই দায়িত্ববহনে কংগ্রেস অক্ষম বলিয়া মনে হইল। দীর্ঘকাল ধরিয়া কংগ্রেস হাই কমাণ্ডের আলাপ আলোচনার সুযোগে ব্রিটিশ গভর্ণমেণ্ট যুদ্ধ প্রচেষ্টার অছিলায় ভারতের ধন জন ও সম্পদ শোষণ করিতে লাগিল। কংগ্রেস ব্রিটীশের এই শোষণ ও যুদ্ধ সংক্রান্ত নানা উৎপীড়নের কোন প্রতীকার করিতে পারিল না। মহাযুদ্ধের সঙ্কটক্ষণে কংগ্রেস নেতৃত্বের দুর্বলতা ধরা পড়িল। একদিকে কংগ্রেস হাইকমাণ্ডের নিষ্ক্রিয়তা, অন্যদিকে “অহিংসা” প্রয়োগ সম্বন্ধে গান্ধীজি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যায় নিযুক্ত। গান্ধীজি এমন কথাও বলিলেন যে, এই সময়ে কোনপ্রকার আইন অমান্য আন্দোলন আরম্ভ হইলে তিনি নিজের প্রাণ দিয়াও তাহার প্রতিরোেধ করিবেন। কংগ্রেসের এই চূড়ান্ত নিস্ক্রিয়তার সুযোগ গ্রহণ করিয়া ব্রিটিশ সরকার নিজের কাজ হাসিল করিতে লাগিল—দেশের উপর দিয়া যুদ্ধপ্রচেষ্টার “ষ্টীম রোলার” চালইতে থাকিল। যুদ্ধসমস্যাসম্পর্কে গভর্ণমেণ্টের সহিত একটা আপোষ করিবার অত্যুৎসাহেই কংগ্রেস দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় হইয়া পড়িল। গান্ধীজি ঘোষণা করিয়াছেন, তিনি আইন অমান্য আরম্ভ করিবেন না—কংগ্রেসও গান্ধীজির নির্দেশ ব্যতীত কোন