পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

জন্যই উদ্‌গ্রীব হইয়া উঠিয়াছিল? তাহারা কি “স্বাধীনতা” অর্থে এক প্রভুর স্থলে অন্য প্রভুর শাসনই শুধু বুঝিত? প্রকৃত তথ্যের অনুসন্ধানে জানা যায়—বস্তুতঃ পক্ষে তাহার কোন দাসত্বকেই স্বীকার করিতে প্রস্তুত ছিল না। বরং প্রত্যেক দেশের জাগ্রত জাগরণ স্ব স্ব দেশে সম্পূর্ণ স্বাধীন জাতীয় গভর্ণমেণ্ট প্রতিষ্ঠা করিতেই বদ্ধপরিকর ছিল। এই প্রসংগে আমাদের জাপ-আক্রমণের সময়কার সম্পূর্ণ ইতিহাস স্মরণ করা প্রয়োজন।

 পূর্ব্ব-এশিয়ায় যখন জাপানী সরকার যুদ্ধ শুরু করে তখন ব্রিটিশ, ডাচ ও ফরাসী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি যুদ্ধের জন্য আদৌ প্রস্তুত ছিল না। কি অস্ত্রবলে, কি সৈন্য-সামন্তের আয়োজনে মিত্রপক্ষ জাপানের অগ্রগতিকে প্রতিরোধ করিবার মত শক্তি এশিয়ায় সঞ্চয় করে নাই। কিন্তু তৎসত্ত্বেও তাহারা জাপানী আক্রমণ প্রতিরোধ করিতে পারিত যদি তাহারা এশিয়ার জনগণের পূর্ণ সহানুভূতি ও সহযোগিতা লাভ করিতে পারিত। কিন্তু শতাব্দীর উদ্ধত অত্যাচারী, গর্ব্বস্ফীত সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী তাহাদের সাম্রাজ্যের অন্তিম মুহূর্ত্তেও এশিয়াবাসীকে তাহাদের ন্যায্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার লাভ করিতে দেয় নাই। ব্রহ্মদেশের স্বাধীনতার দাবী অস্বীকৃত হইল। ভারতবর্ষে ক্রীপস্ মিশন আসিল—কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার কোন দাবীই স্বীকার করা হইল না। মালয়, জাভা, ইন্দোচীন সর্ব্বত্রই এশিয়াবাসীর স্বাধীনতার দাবীকে পদদলিত করিয়া সাম্রাজ্যবাদী শোষকগণ স্বহস্তে নিজেদের সমাধি রচনা করিল!

 এদিকে যুদ্ধের সংকট দিনের পর দিন তীব্র হইয়া উঠিতেছে। প্রতিদিনের সংবাদপত্রেই মিত্রপক্ষের শোচনীয় পরাজয়ের সংবাদ ভাসিয়া আসিতেছে। সকলেই বুঝিল, যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কোনদিন সূর্য্য অস্ত যাইত না, সেই সাম্রাজ্যেও আর সূর্য্যোদয় হইবে কিনা