পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

পশ্চাদপসরণে রাজী হয় নাই, সহাস্যবদনে মৃত্যু বরণ করিয়াছে। কিন্তু, সুভাষচন্দ্র জানিতেন, ভারতেও বহু নেতা আছেন যাঁহারা আত্মত্যাগের দ্বারা দেশবাসীর শ্রদ্ধা অর্জ্জন করিয়াছেন। দেশবাসী তাঁহাদেরও জাতীয় নেতৃত্বের পুরোভাগে দেখিতে চায়। তাই সুভাষচন্দ্র কোন দিন তাঁহাকে লইয়া বীরপূজা করিতে উৎসাহ দেন নাই। তিনি প্রায়ই বলিতেন “বর্ত্তমানযুগে আমরা মানুষকে দেবতা বানাইয়া পূজা করি না। আমরা সকলের শ্রদ্ধা একজনের উপরই বর্ষণ করি না। আমাদের মনে রাখা উচিত যে ব্যক্তিবিশেষের অপেক্ষা আন্দোলন বড়। আমাদের এখানে কোন ব্যক্তিবিশেষের একনায়কত্ব নাই। আমরা সকলেই সহকর্মী ও যোদ্ধা” (বিদ্রোহিণী তনয়ার ডায়েরী—পৃঃ ৫২)।

 ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৪৩—কুয়ালালামপুরে এক জনসভায় বক্তৃতা করিতে যাইবার সময় ষ্টেশনে তাঁহাকে বিপুলভাবে অভ্যর্থনা করা হইলে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে সুভাষচন্দ্র বলেন: “আপনারা এই ধরণের বীরপূজা বরদাস্ত করিবেন না। ইহা আমাদের আন্দোলনের উপর চরম অভিশাপ ডাকিয়া আনিবে। উদ্দেশ্য ও আদর্শের জন্য আত্মোৎসর্গের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করিতে ও স্বীকার করিয়া লইতে জনসাধারণকে প্রস্তুত থাকিতে হইবে। কেবল এই পথেই তাহাদের উদ্যম পরিচালিত হওয়া উচিত। নেতারা সাময়িক। তাহারা আসেন এবং চলিয়া যান। কিন্তু আন্দোলন সব সময়েই চলিতে থাকিবে (ঐ পৃঃ ৫৬)।

 আজাদ হিন্দ বাহিণীর সম্মুখে বক্তৃতাদানকালে জেনারেল তোজো একবার ঘোষণা করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হইলে সুভাষচন্দ্র হইবেন তাহার প্রথম প্রেসিডেণ্ট। ইহাতে সুভাষচন্দ্র অসন্তুষ্ট হইয়া বলেন, “ভারতবর্ষে কে প্রেসিডেণ্ট হইবে সে কথা চিন্তা করিবার অধিকার জেনারেল তোজোর নাই। উহা ভারতবাসীর দায়িত্ব।” এইভাবে জাপানী ফ্যাসিষ্ট ডিকটেটরসিপের পঙ্কিলতার ভিতরও সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের গনতান্ত্রিক আদর্শকে