পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৭৯

করিয়া ফেলিয়াছে—রাজনৈতিক আলােচনায় অন্তর নৈতিক আদর্শপ্রবণতা সহজ সত্য ও মীমাংসার পথ আচ্ছন্ন করিয়াছে। তাই, একপ্রকার শৌখিন নীতিবােধ সার্থকতা ও সাফল্যের বাটখারা দিয়া মানুষের ব্যক্তিত্ব ও কার্য্য কলাপকে তৌল করিয়া লইতেই আমরা অভ্যস্ত। রাজদ্রোহী জর্জ্জ ওয়াশিংটন সাফল্য লাভ করিয়া শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকরূপে বিশ্বপূজিত হইয়াছেন; আর সুভাষচন্দ্রের আপাতব্যর্থতা তাঁহাকে কুইস্‌লিং ও দেশদ্রোহী অপবাদ দিয়াছে! এই আত্মদরস্ফীত যুক্তি-বিলাসীদের বালভাষিত বহুদর্শী প্রজ্ঞাবানদের হাসির খােরাক যােগায়। স্কুল পাণ্ডিত্যদম্ভ ও স্বার্থদুষ্ট সংস্কারের মােহবন্ধন উদার উন্মুক্ত বিচারের কণ্ঠ রুদ্ধ করিয়া দিয়াছে। তাই, মুক্তিসাধনের দুর্জ্জয় সঙ্কল্প ও ত্যাগমাহাত্মের চেয়ে মনুষ্যত্ব বিচারে সফলতার সহজবােধ্য যুক্তিই অধিকতর প্রাধান্য লাভ করিয়াছে। ইংরেজদের কুৎসিৎ অপপ্রচার ও মিথ্যাভাষণ, বিদেশীর কপােলকল্পিত ইতিবৃত্ত সুভাষচন্দ্রের অনিন্দ্য দেশপ্রেমকে যতই ব্যঙ্গ করুক না কেন সত্য কখনই প্রচ্ছন্ন থাকিবে না। ইংরাজের রাজদণ্ড সত্য ও ন্যায়ের কণ্ঠরােধ করিতে পারিবে না। সুভাষচন্দ্রের অলৌকিক প্রতিভা ও অসামান্য ব্যক্তিত্ব-গৌরব মিথ্যা ইতিহাসের অনুশাসনকে বিদ্রূপ করিয়া স্বকীয় মহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করিবে।

“বিদেশীর ইতিবৃত্ত দস্যু বলি করে পরিহাস
অট্টহাস্যরবে,—
পুণ্য চেষ্টা যত তস্করের নিষ্ফল প্রয়াস—
এই জানে সবে।”
“অয়ি ইতিবৃত্ত কথা, ক্ষান্ত করো মুখর ভাষণ।
ওগাে মিথ্যাময়ী,
তােমার লিখন-’পরে বিধাতার অব্যর্থ লিখন
হবে আজি জয়ী।