পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
১৫

সভাপতির অভিভাষনে সুভাষচন্দ্র বলেন—“সন্ন্যাসের প্রতি আগ্রহ যেদিন আমাদের মধ্যে দেখা দিল সেই দিন সমাজেরও রাষ্ট্রের বন্ধন শিথিল হইতে আরম্ভ করিল এবং সমাজের বা রাষ্ট্রের উন্নতি অপেক্ষা নিজের মোক্ষ লাভই মানুষের নিকট অধিক শ্রেয়স্কর বলিয়া পরিগণিত হইতে লাগিল।” এই যে সাধনা ইহা ব্যক্তিত্ব বিকাশের সাধনা— মোক্ষলাভ ও কৈবল্যের সাধনা—সমাজ ও রাষ্ট্রের বন্ধন হইতে নিষ্কৃতি লাভের সাধনা, এই সাধনা সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণের পরিপন্থী। পৃথিবীর বুকে, মানুষের সমাজে যদি বাঁচিয়া থাকিতে চাই তবে সমষ্টিগতভাবে সমাজবদ্ধ হইয়াই বাঁচিতে হইবে। হুগলি জেলা ছাত্রসম্মেলনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র বলেন, “যেদিন ভারত পরাধীন হইয়াছে সেইদিন হইতে ভারত সমষ্টিগত সাধনা ভুলিয়া ব্যক্তিত্ব বিকাশের দিকে সমস্ত শক্তি নিয়োেগ করিয়াছে। ফলে শত শত মহাপুরুষ এইদেশে আবির্ভূত হইয়াছেন। অথচ তাঁহাদের আবির্ভাব সত্ত্বেও জাতি আজ শোচনীয় অবস্থা প্রাপ্ত হইয়াছে। জাতিকে আবার বাঁচাইতে হইলে সাধনার ধারা আবার অন্যদিকে পরিচালিত করিতে হইবে। জাতিকে বাদ দিয়া ব্যক্তিত্বের সার্থকতা নাই—একথা আজ সকলকে হৃদয়ঙ্গম করিতে হইবে।”

 কিন্তু সন্ন্যাসের প্রতি বাল্যের এই আকর্ষণ পরবর্ত্তী কালের বিপুল কর্ম্মচাঞ্চল্যের মধ্যেও সময় সময় তাঁহাকে প্রবলভাবে পাইয়া বসিত। পঙ্কিল রাজনীতিক্ষেত্রে হৃদয়হীনতা, প্রভুত্বস্পৃহা ও স্বার্থদুষ্ট মনোভাবের পরিচয় পাইয়া স্বভাবতঃই তাহার চিত্ত কৈশোরের স্মৃতি-ঘেরা হিমালয়ের নির্জ্জনতার দিকে আকৃষ্ট হইত। ত্রিপুরী কংগ্রেস হইতে ফিরিয়া জামাডোবায় রুগ্নশয্যা হইতে তিনি লিখিয়াছিলেন “যখন আমি জামাডোবায় রোগশয্যায় পড়িয়া যন্ত্রণায় ছটফট করিতেছিলাম, তখন আমার মনে বার বার এই প্রশ্নই উদয় হইত যে, যখন আমাদের মধ্যে