পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৮
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

জনসংখ্যার প্রভূততম সুখ-সাধনের স্বপ্ন, সকল জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তির স্বপ্ন।”

 ১৯৪৩ সালের নভেম্বর মাসে সুভাষচন্দ্র ম্যানিলায় আসিলে জাপানী সংবাদিক হাগিওয়ারা সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে নিম্নোক্ত সুন্দর বিবৃতিটি প্রদান করেন:

 “১৯৪৩ সালে নভেম্বর মাসের ঘটনা। চমৎকার একটি দিন। ম্যানিলার সমুদ্রোপকূলে লুনেটা পার্কে সুভাষচন্দ্র গেলেন জোস রিজলের মর্মর মূর্তিতে মাল্যদান করিতে। এই মূর্তিটি খুবই প্রসিদ্ধ, কেননা জোস রিজল ছিলেন ফিলিপাইনের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক এবং মুক্তি সংগ্রামের শহীদ। মূর্ত্তির পাদদেশে শত শত ভারতীয়ের এক বিরাট জনতা সুভাষচন্দ্রকে ঘিরিয়া ধরিল।·· জনতা উচ্চকণ্ঠে মুহূর্মুহূঃ “জয় হিন্দ” ধ্বনিতে বসুকে জানাইল তাহাদের অভিনন্দন। ফটোগ্রাফাররা ফটো তুলিবে—বসুও দাঁড়াইলেন জনতার সংগে। ফটো লওয়া শেষ হইলে বহুক্ষণ কাটিয়া গেল তিনি নড়েন না! জনতা নিস্তব্ধ— গম্ভীর নীরবতার মধ্যে মৌন, অচঞ্চল দৃষ্টিতে রিজলের মূর্ত্তির দিকে সুভাষ চন্দ্র তাকাইয়া রহিলেন। স্বাধীন ভারতের প্রতীক অঙ্কিত আজাদ হিন্দ পতাকা প্রভাত সমীরণে ইতস্ততঃ আন্দোলিত, বিরাট মূর্ত্তির পাদদেশে সুভাষচন্দ্রের অর্পিত ফুলের রাশি এক কথায় সমগ্র অনুষ্ঠানটি উৎসবের রূপ ধারণ করিয়াছিল। সাগ্রহে প্রতীক্ষমান নীরব জনতার সম্মুখে তিনি সতৃষ্ণনয়নে মূর্ত্তির দিকে তাকাইয়া রহিলেন।

 এইরূপ ঘটনায় হয়ত কেহ কেহ সুভাষচন্দ্রকে ভাবপ্রবণ বলিয়া মনে করিলেন। কিন্তু তাঁহার সহিত. কখনও যদি কাহারও আলাপ হইয়া থাকে তাহার এই রকম ধারণা হইবে বলিয়া আমার মনে হয় না। পক্ষান্তরে আমার বহু সহকর্মী আমাকে বলিয়াছেন যে, তাঁহারা তাঁহার শান্ত-সমাহিত ভাব এবং গভীর চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হইয়াছেন।