আমার ছেলে-মেয়ে!) নেতাজী তাঁহার প্রিয় বাল-সেনাদলকে কী গভীর স্নেহই না করিতেন!
একদিন সুভাষচন্দ্র এক সামরিক হাসপাতাল পরিদর্শনে আসিয়া দেখেন একটি সাধারণ সৈনিকের গায়ে কোট নাই—সে শীতে নিদারুণ কষ্ট পাইতেছে। নেতাজী তৎক্ষণাৎ নিজের কোটটি খুলিয়া সৈনিকের গায়ে পরাইয়া দিলেন। সৈনিকটি এই অপ্রত্যাশিত মহৎ দান গ্রহণ করিতে প্রথমে ইতস্ততঃ করিতেছিল কিন্তু নেতাজীর দান তাহাকে গ্রহণ করিতেই হইল। সৈনিকটি শেষে কোটটি খুলিয়া রাখিয়া নেতাজীর কাছে শপথ করিল যে, ভারত স্বাধীন না হওয়া পর্য্যন্ত নেতাজীর দেওয়া এই কোট সে ব্যবহার করিবে না।
১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ব্রিটীশ বিমান বাহিনী রেঙ্গুনের মিয়াং সহরে আজাদ হিন্দ ফৌজের হাসপাতালের উপর বোমা বর্ষণ করে। হাসপাতালের ছাদের উপর ‘রেডক্রস’ পতাকা উড়িতেছিল তৎসত্ত্বেও শত্রুসৈন্যেরা নিরীহ চলৎশক্তিরহিত আহত সৈনিকদের উপর বোমা ফেলে। এ সংবাদ পাওয়া মাত্রই নেতাজী অত্যন্ত বিচলিত হইয়া পড়েন। ‘এ কী নির্মম আক্রমণ রোগীদের উপর!’ তিনি তৎক্ষণাৎ ড্রাইভারকে গাড়ী প্রস্তুত করিতে হুকুম দিলেন। তখনও অবিশ্রাম বোমা বৃষ্টি হইতেছে। সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করিয়া নেতাজী নিজের জীবন বিপন্ন করিয়া হাসপাতালে উপস্থিত হইলেন। সেখানে যাহা দেখিলেন তাহাতে তাঁহার চক্ষু স্থির হইয়া গেল। ‘এ-সব দুর্বল রোগীদের উপর শত্রুরা কি অমানুষিক অত্যাচার করিয়াছে!’—এই কথা বলিতে বলিতে তাঁহার দুই চক্ষু জলে ভরিয়া উঠিল।
নেতাজী রুগ্ন-অসুস্থ সৈন্যদের বিছানার পার্শ্বে বসিয়া তাহাদের সেবাশুশ্রুষা করিতেন। তিনি প্রায়ই বলিতেন,—“আমি আর কে? এরাই ত সব। এরাই ত স্বাধীন ভারতের বীর—দেশের ভবিষ্যৎ আশা-ভরসাস্থল।”