পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

নায়কের পদে সমাসীন হইয়া সৈনিক জীবনের কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা ও দুঃখ-কষ্টকে তিনি অকুণ্ঠিতচিত্তে মানিয়া লইয়াছেন। সহকর্মীদের সুখ ও আরামের দিকে চাহিয়া নিজের সমস্ত সুখ-সম্ভোগ পরিত্যাগ করিতে পারিয়াছিলেন বলিয়াই কেহ তাঁহার জন্য চরম আত্মত্যাগেও কুণ্ঠিত হইত না। সুভাষচন্দ্রের অনিন্দ্য দেশপ্রেম তাহাদিগকে পবিত্র স্বদেশমন্ত্রে উজ্জীবিত করিয়াছিল—ত্যাগ ও সংগ্রামের মহান ব্রতে দীক্ষা দিয়াছিল।

 ১৯৪৪ সালের ২৬শে জানুযারী স্বাধীনতা দিবসে নেতাজী সুভাষচন্দ্র রেঙ্গুনের এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা করেন। সভার প্রারম্ভে নেতাজীকে মাল্য ভূষিত করা হয়। বক্তৃতা করিবার সময় তিনি ফুলের মালাটি হাতে জড়াইয়া রাখিয়াছিলেন। নেতাজীর বক্তৃতা সমাপ্ত হইলে শ্রোতৃবর্গের উৎসাহ ও উদ্দীপনা চরমে উঠিল। হঠাৎ তিনি এক মতলব ফাঁদিলেন। সকলকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কেহ তাঁহার মালাটি কিনিতে প্রস্তুত আছে কিনা। এই মালার বিক্রয়লব্ধ অর্থ ফৌজের ধনভাণ্ডারে যাইবে—ইহাও তিনি জানাইলেন।

 সংগে সংগে দর উঠিতে লাগিল। প্রথম ডাক হইল ১ লক্ষ টাকার। এক লাখ—দেড় লাখ—তিন লাখ—চার—সোওয়া চার—ছয়, সাত—ক্রমেই দর চড়িতে লাগিল। এক ধনী পাঞ্জাবী যুবক সর্বপ্রথম দর হাঁকে। যত দর উঠিতে থাকে সেও দর বাড়াইতে থাকে। যখন সাত লাখ টাকা ডাক হইল যুবকটি অত্যন্ত বিচলিত হইয়া পড়িল। কিন্তু নেতাজীর গলার মালাটি তাহার চাই-ই। সে আর স্থির থাকিতে পারিল না। সুভাষচন্দ্রের মঞ্চেরদিকে ছুটিয়া গিয়া চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল—“নেতাজী, আমি আপনার মালার জন্য সর্বস্ব দিতে চাই—আমার শেষ কপর্দক পর্য্যন্ত।”বলিতে বলিতে উত্তেজনায়:যুবকটি কাঁপিতে লাগিল। সুভাষচন্দ্র দুই হস্ত প্রসারিত করিয়া তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া কহিলেন: “তোমার