পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
২৯৫

 আজাদ হিন্দ ফৌজের শেষ যুদ্ধে সুভাষচন্দ্র যখন দেখিলেন জয়ের আর কোন আশাই নাই তখন তিনি তাঁহার সৈন্যগণকে পশ্চাদপসরণের আদেশ দিলেন। অধিনায়কের মারফৎ প্রদত্ত এই আদেশ তাহারা মানিতে চাহিল না। এমনকি তাহারা বিদ্রোহ করিবার উপক্রম করিল। কারণ, তাহারা মনে করিল তাহাদের অধিনায়ক বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া তাহাদিগকে যুদ্ধ হইতে বিরত হইতে বলিতেছেন। তাহারা বলিল —“আমাদের উপর সিপাহশালর নেতাজীর আদেশ, আমাদিগকে দিল্লী পৌঁছিতে হইবে। কোন অবস্থাতেই তিনি আমাদের পশ্চাদপসরণ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।” অধিনায়ক ও সৈন্যধ্যক্ষগণ অনেক বুঝাইলেন—“আমাদের রণ-সম্ভার নাই, মোটর বা ট্রাঙ্ক নাই, খাদ্য নাই, ঔষধ নাই— ঘাস-পাতা খাইয়া জীবন ধারণ করিয়া আছি। জাপানীরা তো ইতিমধ্যেই পশ্চাদপসরণ করিয়াছে। এ অবস্থায় পশ্চাদপসরণ করা ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নাই।” কিন্তু সৈন্যগণ তাহাদের সঙ্কল্পে অটল। তাহারা বলিল—“আমরা ঘাস-পাতা খাইয়া এ যাবৎ বাঁচিয়া আছি। শেষদিন পর্য্যন্ত তাহাই করিব। আমাদের ঔষধ-পথ্য ছাড়াই চলিবে। নেতাজীর কাছে মৃত্যুপণ করিয়াছি। নেতাজীর মর্য্যাদা ক্ষুণ্ণ হইতে দিব না। হয় যুদ্ধ করিতে করিতে অগ্রসর হইব—না হয় রণক্ষেত্রে শেষ শয্যা গ্রহণ করিব।” অবশেষে যখন তাহারা কিছুতেই রাজী হইতে চাহিল না তখন নেতাজীর স্বহস্তলিখিত আদেশনামা দেখান হইল। সৈন্যগণ স্বীকৃত হইল। কিন্তু শোকে অধীর হইয়া শিশুর মত চীৎকার করিয়া কাঁদিতে লাগিল। ভারতকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করিয়া নেতাজীর হাতে স্বাধীন ভারতকে তুলিয়া দিতে পারিল না বলিয়া আত্মগ্লানি ও ক্ষোভে তাহাদের মন ভরিয়া উঠিল। তাহারা বলিল—“নেতাজী, তোমার কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলাম হতভাগ্য আমরা তাহা পালন করিতে পারিলাম না।”

 নেতাজী সৈন্যদলের মধ্যে আদর্শ-নিষ্ঠা ও আত্মোৎসর্গের মহৎ