পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৬
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

স্বতঃ উদ্যত ইচ্ছার। বাঙ্গালীর সম্মিলিত ইচ্ছা বরণ করুক তােমাকে নেতৃত্ব পদে, সেই ইচ্ছা তােমাকে সৃষ্টি করে তুলুক তােমার মহৎ দায়িত্বে, সেই ইচ্ছাতে তােমার ব্যক্তিস্বরূপকে আশ্রয় করে আবির্ভূত হােক সমগ্রদেশের আত্মস্বরূপ।

 বাঙ্গলাদেশের ইচ্ছায় মুক্তি একদিন প্রত্যক্ষ করেছি বঙ্গভঙ্গরােধের আন্দোলনে। বঙ্গ কলেবর দ্বিখণ্ডিত করবার জন্যে সমুদ্যত খড়্গকে প্রতিহত করেছিল এই ইচ্ছা। যে বহুবলশালী শক্তির প্রতিপক্ষে বাঙ্গালী সেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল সেই রাজশক্তির অভিপ্রায়কে বিপর্য্যস্ত করা সম্ভব কিনা এ নিয়ে সেদিন সে বিজ্ঞের মতো তর্ক করেনি, বিচার করেনি, কেবল সে সমস্ত মন দিয়ে ইচ্ছা করেছিল। তার পরবর্ত্তীকালের প্রজন্মে (generation) ইচ্ছার অগ্নিগর্ভরূপ দেখেছি বাংলায় তরুণদের চিত্তে। দেশে তারা দীপ জ্বালাবার জন্যে আলাে নিয়েই জন্মেছিলে, ভুল করে আগুন লাগাল, দগ্ধ করল নিজেদের, পথকে করে দিল বিপথ। কিন্তু সেই দারুণ ভুলের সাংঘাতিক ব্যর্থতার মধ্যে বীর হৃদয়ের যে মহিমা ব্যক্ত হয়েছিল সেদিন ভারতবর্ষের আর কোথাওতো তা দেখিনি। তাদের সেই ত্যাগের পর ত্যাগ, সেই দুঃখের পর দুঃখ, সেই তাদের প্রাণনিবেদন, আশু নিষ্ফলতায় ভস্মসাৎ হয়েছে কিন্তু তারা ত নির্ভীক মনে চিরদিনের মত প্রমাণ করে গেছে বাঙ্গালার দুর্জ্জয় ইচ্ছাশক্তিকে। ইতিহাসের এই অধ্যায়ে অসহিষ্ণু তারুণ্যের যে হৃদয়বিদারক প্রমাদ দেখিয়েছিল তার উপরে আইনের লাঞ্ছনা যত মসী লেপন করুক তবু কি কালাে করতে পেরেছে তার অন্তর্নিহিত তেজোস্ক্রিয়তাকে?

 আমরা দেশের দৌর্বল্যের লক্ষণ অনেক দেখেছি, কিন্তু যেখানে পেয়েছি তার প্রবলতার পরিচয় সেইখানেই আমাদের আশা প্রচ্ছন্ন ভূগর্তে ভবিষ্যতের প্রতীক্ষা করেছে। সেই প্রত্যাশাকে সম্পূর্ণ প্রাণবান ও ফলবান করবার ভার নিতে হবে তােমাকে; বাঙ্গালীর স্বভাবে যা কিছু