পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৩১

কাজেই সুভাষচন্দ্র তাঁহার দক্ষিণহস্তস্বরূপ ছিলেন। উত্তরবঙ্গ হইতে ফিরিয়াই সুভাষচন্দ্র দেশবন্ধুর কাউন্সিল প্রবেশের প্রোগ্রামকে জনপ্রিয় ও কার্য্যকরী করিবার জন্য “বাঙ্‌লার কথা” নামে একখানা দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশ করেন ও অত্যন্ত যোগ্যতার সহিত তাহার সম্পাদনা করেন। গয়া কংগ্রেসের পরেই স্বরাজ্যদলের মুখপত্র “ফরোয়ার্ড” পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকা পরিচালনার ভারও সুভাষচন্দ্রের উপরই ন্যস্ত হয়। তাঁহার সম্পাদনা ও পরিচালনায় এই পত্রিকার খ্যাতি ও প্রচার বিশেষভাবে বিস্তৃতিলাভ করে। সেই বৎসর কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন সভার নির্ব্বাচনে স্বরাজ্যদলের সাফল্য সুভাষচন্দ্রের সংগঠনশক্তির শ্রেষ্ঠ পরিচয়। এই নির্ব্বাচনে স্বরাজ্যদলের বিরাট জয়লাভ ভারতে রাজনৈতিক নির্ব্বাচনের ইতিহাসে একটি অতি প্রসিদ্ধ ঘটনা। স্বরাজ্য দলের অখ্যাত, অজ্ঞাত প্রার্থিগণ বহু লব্ধপ্রতিষ্ঠ প্রবীণ মহারথিগণকে নির্ব্বাচনে বিপুল ভোটাধিক্যে পরাজিত করিয়া রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। স্বরাজ্যদলের মত একটি অপরিচিত দলের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই এই বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠালাভ ইহার কৃতিত্ব বহুলাংশে সুভাষচন্দ্রের প্রাপ্য। দেশবন্ধু ছিলেন এই দলের সার্ব্বভৌম নেতা ও সুভাষচন্দ্র উহার প্রাণশক্তি।

 এই সময়ে সুভাষচন্দ্র বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক নির্ব্বাচিত হন। সুভাষচন্দ্র নিজে নির্ব্বাচনে দাঁড়ান নাই। কাউন্সিলের বাহিরে তখন যথেষ্ট কাজ ছিল। সুভাষচন্দ্রের কাজের একটা বৈশিষ্ট্য এই ছিল যে তিনি “আদর্শ নীরব কর্ম্মী”র মত নিঃশব্দে জনতার অলক্ষ্যে অদৃশ্য ঐন্দ্রজালিকের মত কাজ করিয়া যাইতেন। জনসভায় শ্রোতৃবৃন্দের করতালি ও বাহবাধ্বনির প্রতি তাঁহার কোন আকর্ষণ ছিল না। সুভাষচন্দ্রের আর একটি বৈশিষ্ট্য—তিনি সকলের সঙ্গে অমায়িকভাবে মেলামেশা করিতেন। অহঙ্কার বা আভিজাত্যের ভাব তাঁহার আচরণে