পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২ ]

সকল জাতির সমরনায়কদের অকুণ্ঠ ও অপরিসীম শ্রদ্ধা, ভক্তি ও আনুগত্যদর্শনে প্রত্যেক বাঙ্গালীই আজ গর্ব অনুভব করিতেছে। পরাধীন ভারতের মুক্তিপ্রচেষ্টায় নেতাজী সুভাষচন্দ্র একাধারে গ্যারিবল্ডী, ওয়াশিংটন, লেনিন ও ডি, ভ্যালেরার স্থান অধিকার করিয়াছেন। এই বিশ্ব-বিশ্রুতকীর্ত্তি মহামানব বাঙ্গালী তথা ভারতবাসীকে বিশ্বজনসভায় অপূর্ব মহিমা ও প্রতিষ্ঠার আসন দান করিয়াছেন।

 বিগত শতকে বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে যে বিরাট জাগরণ ঘটিয়াছিল, জাতীয় জীবনের সর্বাবয়ব স্ফূর্ত্তি ও বিকাশের যে উৎসাহ ও উৎসবের সূচনা হইয়াছিল, যাহার ফলে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, বঙ্কিম, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, চিত্তরঞ্জন প্রমুখ মনীষী ও কর্মবীরগণ ভারতীয় সংস্কৃতি ও চিন্তাধারায় অবিনশ্বর কীর্ত্তি স্থাপন করিয়া গিয়াছেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র সেই জাগরণকালের বাঙ্গালীপ্রধানদের সাধনারই গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যবাহী শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী সন্তান। রাষ্ট্রীয় সাধনার ক্ষেত্রে বাঙ্গালী যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যোজ্জ্বল প্রাণশক্তির পরিচয় দিয়া আসিয়াছে, নেতাজীর সাধনায়ও আমরা বাঙ্গালীর সেই স্বধর্মের পূর্ণ বিকাশই দেখিতে পাই।

 সম্প্রতি কয়েক বৎসর যাবৎ এক ভয়াবহ জাতীয় দৌর্ব্বল্য বাঙ্গালীর জীবনে কৃষ্ণমেঘের সঞ্চার করিয়াছে। মহাজাতি গঠনের ভিত্তি সুদৃঢ় করিতে হইলে যে গণবুদ্ধি ও গণশক্তির অপরিহার্য্য প্রয়োজন বাঙ্গালীর জীবনে তাহার শোচনীয় অভাব দেখা গিয়াছে। বাঙ্গালীর চারিত্রিক দৃঢ়তা অপেক্ষা ভাবাবেগবিহ্বলতাই সমধিক—ইহারই ফলে বাঙ্গালী দীর্ঘকাল একাসনে কোন আদর্শের সাধনায় নিমগ্ন থাকিতে পারে নাই। বাঙ্গালী চরিত্রবলে ও কর্ম্মক্ষমতায় যেমন দুর্বল, মেধা ও মননশীলতায় তেমনই শক্তিমান—বাঙ্গালী কর্মজগতে যেমন অপটু, ভাবজগতে তেমনই কল্পনাকুশল। ইহারই ফলে বাঙ্গালী ব্যক্তিজীবনে ব্যক্তিত্বসাধনার ক্ষেত্রে