পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
8৩

লাজপৎ রায়ের ন্যায় নেতাও দেশে ফিরিতে পারিতেন না। সরকার যখন আমাকে একবার সন্দেহের চক্ষে দেখিয়াছেন, তখন আমার ভবিষ্যৎ অবস্থা কিরূপ হইবে সহজেই অনুমান করা যায়।

 আমি জানি পুলিসের গােয়েন্দারা এ বিষয়ে একটু অধিক কার্য্যতৎপরতা দেখাইয়া থাকেন। আমি ইউরােপে যত শান্তভাবে এবং সাবধানতার সহিত বাস করি না কেন, তাঁহারা ভারত সরকারের নিকট আমার বিরুদ্ধে অন্যায় রিপাের্ট পাঠাইবেন। আমি কিছু না করিলেও এবং খুব শান্তভাব থাকিলেও তাঁহারা আমাকে ভীষণ ষড়যন্ত্রের কর্ত্তা বলিয়া রিপাের্ট দিবেন। তাঁহারা কি রিপাের্ট দিতেছেন, তাহার কিছুই আমি জানিতে পারিব না। কাজেই কোন কালে সে সম্বন্ধে সত্য প্রকাশের বা আমার বিবরণ প্রদানের সম্ভবনা থাকিবে না। এইরূপ ভাবে ইহা খুব সম্ভব যে ১৯২৯ খৃষ্টাব্দ আসিবার পূর্ব্বেই তাঁহারা আমাকে একজন বড় বলশেভিক নেতা বলিয়া প্রচার করিয়া দিবেন এবং তাহার ফলে হয়ত আমার ভারতে প্রত্যাগমনের পথ চিরতরে রুদ্ধ হইয়া যাইবে; কারণ, ইউরােপের লােক বর্ত্তমানে এক বলশেভিকেই ভয় করে। এইজন্যই স্বেচ্ছায় আমি আমার জন্মভূমি হইতে নির্ব্বাসিত হইতে ইচ্ছা করি না। সরকার পক্ষও যদি আমার দিক হইতে একবার এ বিষয়ের আলােচনা করেন তাহা হইলে আমার যুক্তি হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিবেন।

 যদি আমার বলশেভিক এজেণ্ট হইবার ইচ্ছা থাকিত, তবে আমি সরকার বলিবামাত্র প্রথম জাহাজেই ইউরােপ যাত্রা করিতাম। তথায়, স্বাস্থ্য পুনঃপ্রাপ্তির পর বলশেভিক দলে মিশিয়া সমগ্র জগতে এক বিরাট বিদ্রোহ ঘােষণা করিবার উদ্দেশ্যে প্যারিস হইতে লেনিনগ্রাড পর্য্যন্ত ছুটাছুটি করিতাম; কিন্তু আমার সেরূপ কোন ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা নাই। যখন শুনিলাম যে আমাকে ভারত, ব্রহ্মদেশ ও সিংহলে ফিরিয়া আসিতে দেওয়া হইবে না, তখন বার বার মনে মনে ভাবিলাম সত্যই কি আমি