পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

নিকট এক পত্রে তিনি লিখিয়াছিলেন—“আজ বাঙ্‌লার সর্ব্বত্রই কেবল দলাদলি ও ঝগড়া এবং যেখানে কাজকর্ম্ম যত কম, সেখানে ঝগড়া তত বেশী···আমি শুধু এই কথা ভাবি—ঝগড়া করিবার জন্য এতলোক পাওয়া যায়—কিন্তু মিলাইতে পারে, মীমাংসা করিয়া দিতে পারে—এরকম একজন লোকও আজ সারা বাঙ্‌লার মধ্যে পাওয়া যায় না?···আজ বাঙ্‌লার সর্ব্বত্র কেবল ক্ষমতার জন্য কাড়াকাড়ি চলিতেছে। যার ক্ষমতা আছে—সেই ক্ষমতা বজায় রাখিতেই সে ব্যস্ত। যার ক্ষমতা নাই, সে ক্ষমতা কাড়িবার জন্য বদ্ধপরিকর। উভয় পক্ষই বলিতেছে—দেশোদ্ধার যদি হয় তবে আমার দ্বারাই হউক। নয় তো হইয়া কাজ নাই। এই ক্ষমতা-লোলুপ রাজনীতি-ব্যবসায়ীদের ঝগড়া বিবাদ ছাড়িয়া নীরবে আত্মোৎসর্গ করিয়া যাইতে পারে, এমন কর্ম্মী কি বাঙ্‌লায় আজ নাই?”

 “আজ বাঙ্‌লার অনেক কর্ম্মীর মধ্যে ব্যবসাদারী ও পাটোয়ারী বুদ্ধি বেশ জাগিয়া উঠিয়াছে। তাহারা এখন বলিতে আরম্ভ করিয়াছে, “আমাকে ক্ষমতা দাও—কর্ম্মচারীর পদ দাও—অন্ততঃপক্ষে কার্য্যকরী সমিতির সভ্য করিয়া দাও—নতুবা আমি কাজ করিব না।” আমি জিজ্ঞাসা করি নরনারায়ণের সেবা ব্যবসাদারীতে, contract এ কবে পরিণত হইল? আমি ত জানিতাম সেবার আদর্শ এই:—

“দাও দাও ফিরে নাহি চাও
থাকে যদি হৃদয়ে সম্বল।”

 যে বাঙালী এত শীঘ্র দেশবন্ধুর ত্যাগের কথা ভুলিয়াছে—সে যে কতদিনের আগেকার স্বামী বিবেকানন্দের ‘বীরবাণী’ ভুলিবে—ইহা আর বিচিত্র কি? দুঃখের কথা, কলঙ্কের কথা, ভাবিতে গেলে বুক ফাটিয়া যায়। প্রতিকারের উপায় নাই—করিবার ক্ষমতা নাই—তাই অনেক সময় ভাবি চিঠি পত্র লেখা বন্ধ করিয়া বাহ্যজগতের সহিত সকল সম্বন্ধ শেষ