সন্ধ্যার নিবিড় ছায়ার আক্রমণে দিবাকর যখন মান্দালয় দুর্গের উচ্চপ্রাচীরের অন্তরালে অদৃশ্য হয়, অন্তগমনোন্মুখ দিনমণির কিরণজালে যখন পশ্চিমাংশ সুরঞ্জিত হয়ে উঠে এবং সেই রক্তিম রাগে অসংখ্য মেঘখণ্ড রূপান্তর লাভ করে দিবালোক সৃষ্টি করে—তখন মনে পড়ে সেই বাঙ্লার আকাশ, বাঙ্লার সূর্য্যাস্তের দৃশ্য। এই কাল্পনিক দৃশ্যের মধ্যে যে এত সৌন্দর্য্য রয়েছে তা কে পূর্ব্বে জানত!
প্রভাতের বিচিত্র বর্ণচ্ছটা যখন দিঙ্মণ্ডল আলোকিত ক’রে এসে নিদ্রালস নয়নের পর্দ্দায় আঘাত করে বলে, ‘অন্ধ জাগো’—তখনও মনে পড়ে আর একটা সূর্য্যোদয়ের কথা, যে সূর্য্যোদয়ের মধ্যে বাঙ্লার কবি, বাঙ্লার সাধক বঙ্গজননীর দর্শন পেয়েছিল।”
পরলোকগত ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টেপোধ্যায়ের নিকট এক পত্রে তিনি লিখিয়াছেন, “এখানে না এলে বোধ হয় বুঝতুম না সোনার বাঙ্লাকে কত ভালবাসি। আমার সময়ে সময়ে মনে হয়, বোধ হয় রবিবাবু কারারুদ্ধ অবস্থা কল্পনা করেই লিখেছেন,—
“আমার সোনার বাঙ্লা! আমি তোমায় ভালবাসি,—
“চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস
আমার প্রাণে বাজায় বাঁশী”
যখন ক্ষণেকের তরে বাঙ্লার বিচিত্ররূপ মানস চক্ষের সম্মুখে ভেসে উঠে, তখন মনে হয় অন্ততঃ এই অনুভূতির জন্যও কষ্ট করে মান্দালয় আসা সার্থক হয়েছে। কে আগে জানত ‘বাঙ্লার মাটি, বাঙ্লার জল’ বাঙ্লার আকাশ, বাঙ্লার বাতাস এত মাধুরী আপনার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে।”
সুভাষচন্দ্র লিখিয়াছিলেন “সাধারণতঃ একটা দার্শনিক ভাব বন্দীদশায় মানুষের অন্তরে শক্তির সঞ্চার করে।” কারাবাসের দীর্ঘ দুই বৎসরকাল তিনি নিজকে ভবিষ্যতের কঠিনতর সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করিয়াছেন,