পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

আত্ম-শক্তির উদ্বোধন করিয়া তিনি অজেয় হইয়া উঠিয়াছেন। দুঃখের অন্তরে যে শক্তির উৎস সেই উৎস হইতেই তিনি শক্তি সংগ্রহ করিয়াছেন। জেলের নির্জ্জনতার মধ্যে তিনি এই শক্তির সাধনা করিয়াছেন। শ্রীযুক্ত অনাথবন্ধু দত্তকে ১৯২৬ সালের ডিসেম্বরে এক পত্রে তিনি লিখিয়াছিলেন, “আমার প্রার্থনা শুধু এই—‘তোমার পতাকা যারে দেও, তারে বহিবারে দাও শকতি।’ যখনই জেল হইতে মুক্তির কল্পনা করি তখন আনন্দ যত হয়, তার চাইতে বেশী হয় ভয়। ভয় হয়, পাছে প্রস্তুত হতে না হতে কর্ত্তব্যের আহ্বান এসে পৌঁছায়। তখন মনে হয়, প্রস্তুত না হওয়া পর্য্যন্ত যেন কারামুক্তির কথা না উঠে। আজ আমি অন্তরে-বাহিরে প্রস্তুত নই, তাই কর্ত্তব্যের অহ্বান এসে পৌঁছায় নাই। সেদিন প্রস্তুত হব সেদিন এক মুহূর্ত্তের জন্যও আমাকে কেহ আট্‌কে রাখতে পারবে না।”

 ১৯২৭ সালের ৬ই এপ্রিল ইন্‌সিন্ জেল হইতে “আত্মশক্তি” সম্পাদক শ্রীযুক্ত গোপাল লাল সান্যালকে লিখেন, “জীবন প্রভাতে এই প্রার্থনা বুকে লইয়া কর্ম্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিলাম, ‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি।’ ভবিষ্যতের কথা মানি না, তবে এখন পর্যন্ত ভগবান সে প্রার্থনা সফল করিয়া আসিতেছেন। তাই আমি বড় সুখী—সময়ে সময়ে মনে হয়, আমার মত সুখী জগতে আর কয়জন আছে? এখন এই বৃত্তাকার উন্নত প্রাচীরের বাহিরে যাইবার আশা যে পরিমাণ সুদূরপরাহত হইতেছে, সেই পরিমাণে আমার চিত্ত শান্ত ও উদ্বেগশূন্য হইয়া আসিতেছে। অন্তরের মধ্যে বাস করা ও অন্তরের আত্মবিকাশের স্রোতে জীবনতরী ভাসাইয়া দেওয়ার মধ্যে পরম শান্তি আছে এবং বেশী দিন কারারুদ্ধ অবস্থায় বাস করিতে হইলে অন্তরের শান্তিই একমাত্র সম্বল, তাই সুদীর্ঘ কারাবাসের সম্ভাবনায় আমি এক অপূর্ব্ব শান্তি পাইতেছি। Emerson বলিয়াছেন, “we must