পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র

অর্থের খুব প্রয়োজন তখন অর্থ পাওয়া যায় না। যে বাড়ীতে একসময়ে লোক ধরত না, সেখানে কি বন্ধু, কি শত্রু কাহারও চরণধূলি আর পড়ে না। কাজেই আমরা কয়েকটা প্রাণী মিলে আসর জমাতুম। পরে সখন সেই বাড়ীর পূর্ব্বগৌরব ফিরে এল, বাহিরের লোক এবং পদপ্রার্থীরা যখন এসে আবার সভাস্থল দখল করল, তখন আমরা কাজের কথাও বলবার সময় পাই না। কত পরিশ্রমের ফলে, কি রকম হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ভাণ্ডারে অর্থ সঞ্চয় হল, নিজেদের ঘরের কাগজ প্রকাশিত হল এবং জনমত অনুকূলদিকে ফেরানো হল তা বাহিরের লোক জানে না, বোধ হয় কোনদিন জানবেও না। কিন্তু এই যজ্ঞের যিনি ছিলেন হোতা, ঋত্বিক, প্রধান পুরোহিত, যজ্ঞের পূর্ণ সমাপ্তির আগেই তিনি কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ভিতরের আগুন, বাহিরের কর্ম্মভার এই দুয়ের চাপ তাঁর পার্থিব দেহ আর সহ্য করতে পারল না।” দেশবন্ধুর জীবনচরিত প্রণেতা শ্রীযুক্ত হেমেন্দ্রনাথ দাসগুপ্তকে তিনি লিখেন, “মন্ত্র বা সাধয়েয়ম্ শরীরং বা পাতয়েয়ম্” এই বাণী দেশবন্ধুর হৃদয়ের মধ্যে গাথা ছিল। তিনি দুর্ব্বার বিক্রমে যখন যে পথে চলিতেন কেহ তাঁহাকে রোধ করিতে পারিত না। সমুদ্রের তরঙ্গায়িত জলরাশির ন্যায় সকল বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করিয়া আপনার বেগে আপন আদর্শের পানে ছুটিতেন। প্রিয়জনের আর্ত্তনাদ অথবা অনুচরবর্গের সাবধান বাণীও তাঁহাকে ফিরাইতে পারিত না। এই দিব্যশক্তি দেশবন্ধু কোথা হইতে পাইলেন? সে শক্তি কি সাধনার দ্বারা লভ্য?

 আমি পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, দেশবন্ধু শক্তির সাধক হইলেও তিনি তন্ত্রমতে শক্তির সাধনা করেন নাই। তাঁহার প্রাণ ছিল বড়; আকাঙ্ক্ষা ছিল বড়। ‘যো বৈ ভূমা তৎসুখং নাল্পে সুখমস্তি” এই কথা যেন তাঁহার অন্তরের বাণী ছিল। তিনি যখন যাহা চাহিতেন সমস্ত প্রাণ মন বুদ্ধি দিয়া চাহিতেন। তাহা পাইবার জন্য একেবারে পাগল হইয়া যাইতেন।