পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৫৯

একান্ত প্রার্থনা।” কিন্তু বিশ্রাম গ্রহণ তাঁহার স্বাস্থ্যের দিক হইতে অবশ্য কর্ত্তব্য হইলেও বিশ্রাম গ্রহণ আর হইয়া উঠিল না। অন্তরে যাঁহার কর্ম্মোন্মাদনা, দেশের ডাক যাঁহার কানে পৌঁছিয়াছে, সে কি ঘরে বসিয়া বিশ্রাম করিতে পারে? পাটনায় এক বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের বর্ত্তমান অবস্থায় আমাদের অসুস্থ থাকা সাজে না।” তিনি পুনরায় কর্ম্মসাগরে ঝাঁপ দিলেন।

 দেশবন্ধুর পরলোকগমনে বাঙ্‌লার রাজনীতির তরণী কর্ণধারবিহীন হইয়া পড়ে। দেশবন্ধুর শূন্য আসন পূর্ণ করিবার মত নেতা একমাত্র সুভাষচন্দ্রই। সুতরাং বাঙ্‌লাদেশবাসী তাঁহাকেই প্রাদেশিক কংগ্রসের সভাপতিপদে বরণ করিলেন। সেই হইতে সুভাষচন্দ্রের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাজনৈতিক জীবন আরম্ভ হয়। মুক্তির ছয়মাসের মধ্যেই মাদ্রাজে ডাঃ আনসারীর সভাপতিত্বে নিখিল ভারত জাতীয় কংগ্রসের অধিবেশন হয়। সেখানে বাঙ্‌লার প্রতিনিধি দল দেশবন্ধুর যোগ্য উত্তরাধিকারীর নেতৃত্বে উপস্থিত হন। মাদ্রাজ অধিবেশনে পণ্ডিত জওহরলালের সহিত সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারী পদে নির্ব্বাচিত হন।

 ১৯২৮ সাল কংগ্রেস আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরনীয় হইয়া আছে। এই বৎসর কংগ্রেসের অভ্যন্তরে তরুণ ও প্রবীনদলের মধ্যে বিশেষ বিরোধ উপস্থিত হয়। পণ্ডিত মতিলাল নেহরুকে সভাপতি করিয়া “নেহরু কমিটি” গঠিত হইল। এই কমিটি এক বৎসরের মধ্যে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্ত শাসন দাবী করিলেন। তরুণ দল পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষপাতী। তাঁহারা ‘নেহরু কমিটির’ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হইতে পারিলেন না। পণ্ডিত জওহরলাল ও সুভাষচন্দ্র এই তরুণ দলের অবিসম্বাদী নেতা। এই পর্য্যন্ত কংগ্রেসের মধ্যে এই দুইজন নেতা—বিশেষ করিয়া সুভাষচন্দ্রই—অগ্রগামী চিন্তা ও কর্মপন্থা প্রবর্ত্তনের জন্য সংগ্রাম করিয়া আসিতেছেন।