পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ৪ ]

 মহানায়কের যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রবীন্দ্রনাথ অন্তর্দৃষ্টিবলে সুভাষচন্দ্রের সাধনায় দেখিতে পাইয়াছিলেন, রবীন্দ্রনাথের সেই আশা ব্যর্থ হয় নাই। নেতাজীর চারিত্রিক দৃঢ়তা, নৈতিকশুচিতা, সংগঠনপ্রতিভা ও শৃঙ্খলানৈপুণ্য আজাদ-হিন্দ-ফৌজ গঠন ও আজাদ-হিন্দ-গভর্ণমেণ্ট প্রতিষ্ঠায় চরম পরিণতি লাভ করিয়াছে।

 এই পশুবৎ-নিগৃহীত, ধূলি-লুণ্ঠিত, আত্মচৈতন্যহীন ভারতীয় জনগণের সীমাহীন দুর্দ্দশাদর্শনে দেশপ্রেমের জীবন্তবিগ্রহ সুভাষচন্দ্রের হৃদয় গভীর মমতায় ও অপরিমেয় অনুকম্পায় আপ্লুত হইয়াছিল—সমগ্র জাতির মুক্তি-পিপাসা তাঁহার অন্তরতম চেতনাকে অধিকার করিয়া এক দুর্বার আকুলতায় রূপ গ্রহণ করিয়াছে। মুক্তিসংগ্রামের নবজীবনযজ্ঞের উদ্গাতা নেতাজীর আহ্বানে তাই জাতিধর্মনির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিবিবর্জ্জিত হইয়া মুক্তিপতাকাতলে সমবেত হইয়াছিল।

 আজ আমরা স্বাধীনতার তোরণদ্বারে উপস্থিত হইয়াছি। দীর্ঘ দুইশত বৎসরের পরাধীনতার তমিস্রা সন্তরণ করিয়া স্বাধীনতাসূর্য্যের উদয়ালোকের অভ্রান্ত পদক্ষেপ আমরা শুনিতে পাইতেছি। জাতির এই নবজন্মক্ষণে মহামানব নেতাজী সুভাষচন্দ্রের তপঃশক্তি, সাধনা ও কর্মের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হইয়া বাঙ্গালী তাহার জাতীয়জীবনের, সমষ্টি-জীবনের সমস্ত আবিলতা ও দুর্বলতা দূর করিয়া মহাজাতিসৌধের ভিত্তি সুদৃঢ় করিয়া গড়িয়া তুলিবে—সমস্ত বাঙ্গালীরই এই আকুল কামনা। “ভারতবর্ষের রাষ্ট্রমিলনযজ্ঞে বাংলার সাধনা, আত্মাহতি ষোড়শোপচারে সত্য হোক, ওজস্বী হোক, বাংলার আপন বিশিষ্টতায় উজ্জ্বল হইয়া উঠুক”—রবীন্দ্রনাথের এই আকুতি বিফল হইবে না। তাই নেতাজীর পুনরাবির্ভাবের জন্য সমগ্র বাঙ্গালী অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করিয়া আছে।

 এই গ্রন্থরচনায় হিতৈষী বন্ধু স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া আমাদিগকে নানাভাবে সাহায্য করিয়াছেন এবং প্রয়োজনবোধে যে সকল গ্রন্থকর্ত্তা ও