পাতা:বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র - প্রফুল্লরঞ্জন রায় - শ্যামদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র
৭৯

করিলেন না। মহাত্মাজীর সুপারিশক্রমে জওহরলাল সভাপতির আসনে সমাসীন—সুতরাং তিনিও সুভাষচন্দ্রের প্রস্তাবের বিরােধী। গান্ধীমণ্ডলের নেতারা তাে গান্ধীজী ব্যতীত অন্যকাহারও প্রােগ্রাম গ্রহণ করিতেই পারেন না। সুভাষচন্দ্রের প্রস্তাব অগ্রাহ্য় হইল। সপ্তরথী বেষ্টিত হইয়া অভিমন্যুর মত বীর বিক্রমে একাকী সংগ্রাম করিয়া তিনি পরাজয় বরণ করিলেন। সেদিন লাহাের কংগ্রেসেই তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, “আজ আমার প্রস্তাব অগ্রাহ্য হইল; কিন্তু, এমন দিন শীঘ্রই আসিবে যেদিন আপনারা অনুরূপ প্রস্তাব গ্রহণ করিতে বাধ্য হইবেন” সেদিন সুভাষচন্দ্রের ব্যাকুল কণ্ঠের করুণ আবেদন শুনিয়া অনেকেই বক্রহাসি হাসিয়াছিলেন। আজ ১৯৪২ সালে আগষ্ট আন্দোলনের ইতিহাসে যখন দেখি সুভাষচন্দ্রের প্রস্তাবিত প্রতিদ্বন্দ্বী গভর্ণমেণ্ট স্থাপনের পরিকল্পনা তমলুক, কাঁথি, সাতারা প্রভৃতি স্থানে কার্য্যকরী করিবার প্রচেষ্টা হইয়াছিল, তখন সুভাষচন্দ্রের কর্মপন্থায় অভ্রান্ত দূর দৃষ্টির পরিচয়ই আমরা পাই।[১]

 ১৯২৯ সালে সুভাষচন্দ্র নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সভাপতি নির্ব্বাচিত হন এবং ১৯৩১ সাল পর্য্যন্ত উক্ত পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। কিন্তু ১৯২৭ সাল হইতে তিনি কংগ্রেস ওয়াকিং কমিটির সদস্য ও জেনারেল সেক্রেটারী থাকা সত্ত্বেও লাহাের অধিবেশনে তাঁহাকে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যপদ পরিত্যাগ করিতে হয়। এই বৎসর মাদ্রাজের জনপ্রিয় নেতা ও ভূতপূর্ব্ব কংগ্রেস সভাপতি নিবাস আয়েঙ্গারকেও কমিটি হইতে বর্জন করা হয়। লাহাের অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র এই মর্মে আর একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন যে, ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যগণ অতঃপর

  1. লাহাের কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্রের যে সংগ্রামশীল রূপ ও প্রখর ব্যক্তিত্ব ফুটিয়া উঠে তৎসম্পর্কে “ট্রিবিউন” পত্রিকায় নিম্নোদ্ধৃত মন্তব্য প্রকাশিত হয়—“Mr. Bose was an embodiment of C. R. Dass's fighting spirit—fighting against every thing that smacked of oppression and for everything that led to the national glory.”