পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbr8 বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ সে সমাজমধ্যে ধৰ্ম্মশাস্ত্ৰাপেক্ষা লোকাচার প্রবল লোকাচারসম্মত, তাহা শাস্ত্ৰবিরুদ্ধ হইলেও প্রচলিত ; যাহা লোকাচার বিরুদ্ধ, তাহা শাস্ত্রসম্মত হইলে প্ৰচলিত হইবে না। বিদ্যাসাগর মহাশয় পূর্বে একবার বিধবাবিবাহের শাস্ত্রীয়তা প্ৰমাণ করিয়াছেন ; প্রমাণ সম্বন্ধে কৃতকাৰ্যও হইয়াছেন ; অনেকেই তাহার মতাবলম্বী ; কিন্তু কয় জন, স্বেচ্ছাপূৰ্ব্বক বিধবাবিবাহের শাস্ত্রীয়তা বা অনুষ্ঠেয়তা অনুভূত করিয়া আপন পরিবারস্থা বিধবাদিগের পুনর্বার বিবাহ দিয়াছেন ? কোন একজন বিশেষ শাস্ত্ৰজ্ঞ, শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানে প্ৰবৃত্ত ব্ৰাহ্মণ লইয়া বসুন। এবং তৎসঙ্গে মম্বাদি স্মৃতিশাস্ত্ৰবিষয়ক গ্ৰন্থ লইয়া এক একটি বচন ধরিয়া র্তাহার আচার ব্যবহারের সহিত মিলাইয়া লিউনা। কয়টি বচনের সঙ্গে তঁহার কৃতানুষ্ঠান মিলিবে ? শাস্ত্ৰজ্ঞ মাত্রেই বলিবেন, অতি অল্প। যদি শাস্ত্ৰজ্ঞ, শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানে প্ৰবৃত্ত ব্ৰাহ্মণদিগের এই দশা, তবে আপামর সাধারণের কথায় আর কাজ কি ? বাস্তবিক মানবাদিধৰ্ম্মশাস্ত্রোক্ত বিধিসকলের সম্পূর্ণ চলন, কোন সমাজমধ্যে সম্ভব নহে। কস্মিন কালে, কোন সমাজে, ঐ সকল বিধি সম্পূর্ণরূপে প্রচলিত ছিল কি না সন্দেহ। সকল বিধিগুলি চলিবার নহে। অনেকগুলি অসাধ্য। অনেকগুলি সাধ্য হইলেও মনুম্বোর এতদূর ক্লেশকর যে, তাহা স্বতই পরিত্যক্ত হয়। অনেকগুলি পরস্পরবিরোধী। এই বিধিগুলি সম্যক প্রচলিত রাখা যদি কোন সমাজের অদৃষ্ট কখন ঘটিয়া থাকে বা কখন ঘটে, তবে সে সমাজের অদৃষ্ট বড় মন্দ সন্দেহ নাই। অনেকেরই বিশ্বাস আছে, প্রাচীন ভারতে এই ধৰ্ম্মশাস্ত্র সম্পূর্ণরূপে প্রচলিত ছিল, কেবল এখনই কালমােহাস্ত্ৰ্যে লুপ্ত হইতেছে। র্যাহার এরূপ বিবেচনা করেন, তঁহাদের সহিত আমরা বিচারে প্রবৃত্ত হইব না। কিন্তু ইহা স্বীকার করি যে, পূর্বকালে ভারতবর্ষে এই সকল বিধি কতক দূর প্রচলিত ছিল, এখনও কতক দূর প্রচলিত আছে। প্রচলিত ছিল, এবং প্রচলিত আছে বলিয়াই ভারতবর্ষের এ অধোগতি। যাহারা ধৰ্ম্মশাস্ত্রব্যবসায়ী, তাহাদিগকে এ কথা বলা বৃথা । কিন্তু অনেক হিন্দু আমাদিগের কথার অনুমোদন করিবেন, ভরসা আছে। আমরা হিন্দুধৰ্ম্মবিরোধী নাহি ; হিন্দুধৰ্ম্ম পরিশুদ্ধ হইয়া প্ৰচলিত থাকে, ইহাই আমাদের কামনা। তাই বলিয়া যাহা কিছু ধৰ্ম্মশাস্ত্ৰ বলিয়া পরিচিত, তাহাই যে হিন্দুধৰ্ম্মের প্রকৃত অংশ, এবং সমাজের মঙ্গলকারক, এ কথা আমরা স্বীকার করিতে পারি না । আমরা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ বুঝিতে পারিয়াছি কি না, বলিতে পারি না । যাদৃচ্ছিাপ্রবৃত্ত বহুবিবাহ শাস্ত্ৰনিষিদ্ধ, সেই কারণেই বহুবিবাহ হইতে, নিবৃত্ত হইতে বলিলে একটি দোষ ঘটে। বহুবিবাহপরায়ণ পক্ষেরা বলিতে পারেন, “যদি আপনি