পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७ বিবিধ প্ৰবন্ধ রাম। লোকে বুঝে না বলিয়া । বাসন্তী। কেন বুঝে না ? রাম। তাহারাই জানে । তখন বাসন্তী আর সহিতে পারিলেন না। বলিলেন, “নিষ্ঠুর ! দেখিতেছি, কেবল যশঃ তোমার অত্যন্ত প্ৰিয় ।” এই কথোপকথনের সমুচিত প্ৰশংসা করা দুঃসাধ্য। সীতা বিসর্জন জন্য বাসন্তী রামপ্রতি ক্ৰোধযুক্ত হইয়াছিলেন, তিনি মানসিক যন্ত্রণারূপ সেই অপরাধের দণ্ড প্ৰণীত করিলেন, সহজেই রামের শোকসাগর উছলিয়া উঠিল। রামের যে একমাত্ৰ শোকোপশমের উপায় ছিল— আত্মপ্ৰসাদ, তাহাও বিনষ্ট করিলেন। রাম জানিতেন যে, তিনি প্ৰজারঞ্জনরূপ কুলধৰ্ম্মের রক্ষার্থই সীতা বিসর্জনরূপ মৰ্ম্মচ্ছেদী কাৰ্য্য করিয়াছেন।—মৰ্ম্মচ্ছেদ হউক, ধৰ্ম্ম রক্ষা হইয়াছে। বাসন্তী দেখিলেন যে, সে ধৰ্ম্মরক্ষা কেবল স্বার্থপরতার পৃথক একটি নামমাত্র। সে কুলধৰ্ম্ম রক্ষার বাসনা কেবল রূপান্তরিত যশোলিন্স মাত্র। কেবল যশোলাভের স্বার্থপর বাসনার বশবৰ্ত্তী হইয়া রাম এই কাজ করিয়াছেন। বাসন্তী আরও দেখিলেন যে, যে যশের আকাঙ্ক্ষায় তিনি এই নিষ্ঠুর, কাৰ্য্য করিয়াছিলেন, সে আকাজক্ষাও ফলবতী হয় নাই । তিনি এই প্ৰকার যশের লাভ লালসায় পত্নীবধরূপ গুরুতর অপযশোর ভাগী হইয়াছেন। বনমধ্যে সীতার কি হইল, তাহার স্থিরতা কি ? ইহার অপেক্ষা গুরুতর অপযশ আর কি হইতে পারে ? তখন রামের শোকপ্ৰবাহ আবার অসম্বরণীয় বেগে ছুটিল। সীতার সেই জ্যোৎস্নাময়ী মৃদুমুগ্ধ মৃণালকল্প দেহলতিকা কোন হিংস্র পশু কর্তৃক বিনষ্ট হইয়াছে, সন্দেহ নাই। এই ভাবিয়া রাম “সীতে । সীতে !” বলিয়া সেই অরণ্যমধ্যে রোদন করিতে লাগিলেন। কখন বা যে কলঙ্কাকুৎসাকারক পৌরজনের কথায় সীতা বিসর্জন করিয়াছিলেন, তাহাদিগের উদ্দেশে বলিতে লাগিলেন, “আমি অনেক সহা করিয়াছি, আমার প্রতি প্ৰসন্ন হও ।” বাসন্তী ধৈৰ্য্যাবলম্বন করিতে বলিলেন। রাম বলিলেন, “সখি, আবার ধৈৰ্য্যের কথা কি বল ? আজি দ্বাদশ বৎসর সীতাশূন্য জগৎ—সীতা নাম পৰ্য্যন্ত লুপ্ত হইয়াছে—তথাপি বঁচিয়া আছি—আবার ধৈৰ্য্য কাহাকে বলে ?” রামের অত্যন্ত যন্ত্রণা দেখিয়া বাসস্তী তঁহাকে জনস্থানের অন্যান্য প্ৰদেশ দেখিতে অনুরোধ করিলেন। রাম উঠিয়া পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। কিন্তু বাসস্তীর মনে সখী বিসর্জনদুঃখ জ্বলিতেছিল—কিছুতেই ट्रलिएशन না । বাসন্তী দেখাইলেন - s: