পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিবিধ প্ৰবন্ধ আমরা সে পথে কঁাটা দিয়াছি। এ দেশীয় প্রাচীন আলঙ্কারিকদিগের ব্যবহৃত শব্দগুলি একালে পরিহাৰ্য্য। ব্যবহার করিলেই বিপদ ঘটে। আমরা সাধ্যানুসারে তাহা বৰ্জন । করিয়াছি, কিন্তু এই রসশব্দটি ব্যবহার করিয়া বিপদ ঘটিল। নয়টি বৈ রস নয়, কিন্তু মনুষ্যচিত্তবৃত্তি অসংখ্যা। রতি, শোক, ক্ৰোধ, স্থায়ী ভাব ; কিন্তু হর্ষ, অমর্ষ প্ৰভৃতি ব্যভিচারী ভাব। স্নেহ, প্ৰণয়, দয়া, ইহাদের কোথাও স্থান নাই ;-না স্থায়ী, না ব্যভিচারীকিন্তু একটি কাব্যানুপযোগী কদৰ্য্য মানসিক বৃত্তি আদিরসের আকারস্বরূপ স্থায়ী ভাবে প্ৰথমে স্থান পাইয়াছে। স্নেহ, ‘প্ৰণয়, দয়াদিপরিজ্ঞাপক রস নাই ; কিন্তু শান্তি একটি রস। সুতরাং এবম্বিধ পারিভাষিক শব্দ লইয়া সমালোচনার কাৰ্য্য সম্পন্ন হয় না। আমরা যাহা বলিতে চাহি, তাহ অন্য কথায় বুঝাইতেছি-আলঙ্কারিকদিগকে প্ৰণাম করি। মনুষ্যের কাৰ্য্যের মূল তাহাদিগের চিত্তবৃত্তি। সেই সকল চিত্তবৃত্তি অবস্থানুসারে অত্যন্ত বেগবতী হয়। সেই বেগের সমুচিত বৰ্ণনদ্বারা সৌন্দৰ্য্যের সৃজন, কাব্যের উদ্দেশ্য। অস্মদেশীয় আলঙ্কারিকেরা সেই বেগবতী মনোবৃত্তিগণকে “স্থায়ী ভাব” নাম দিয়া এ শব্দের এরূপ পরিভাষা করিয়াছেন যে, প্ৰকৃত কথা বুঝা ভার। ইংরাজি আলিঙ্কারিকেরা তাহাকে (Passions) বলেন । আমরা তাহার কাব্যগত প্ৰতিকৃতিকে রসোদ্ভাবন दठिनठलाभ । রসোদ্ভাবনে ভবভূতির ক্ষমতা অপরিসীম। যখন যে রস উদ্ভাবনের ইচ্ছা! করিয়াছেন, তখনই তাহার চরম দেখাইয়াছেন। তাহার লেখনী-মুখে স্নেহ উছলিতে থাকে-শোক দহিতে থাকে, দম্ভ ফুলিতে থাকে। ভবভূতির মোহিনী শক্তিপ্রভাবে আনরা দেখিতে পাই যে, রামের শরীর ভাঙ্গিতেছে ; মৰ্ম্ম ছিড়িতেছে ; মস্তক ঘুরিতেছে ; চেতনা লুপ্ত হইতেছে--দেখিতে পাই, সীতা কখন বিস্ময়স্তিমিতা ; কখন আনন্দোখিত ; কখন প্রেমাভিভূত; কখন অভিমানকুষ্ঠিতা ; কখন আত্মাবমাননাসঙ্কুচিত ; কখন অনুতাপবিবশ ; কখন মহাশোকে ব্যাকুলা। কবি যখন যাহা দেখাইয়াছেন, একেবারে নায়ক নায়িকার হৃদয় যেন বাহির করিয়া দেখাইয়াছেন। যখন সীতা বলিলেন, “অহ্মহে-- জলভরিদমোহখণিদগম্ভীরমাংসলে কুদোণু এসো ভারদীণিগঘোসো ! ভরিজার্মাণকান্নবিবরণ মং বি মন্দভাইণিং ঝত্তি উস্মাবেদি।” তখন বোধ হইল, জগৎ সংসার সীতার প্রেমে পরিপূর্ণ হইল। ফলে রসোদ্ভাবনী শক্তিতে ভবভূতি পৃথিবীর প্রধান কবিদিগের সহিত তুলনীয়। একটি মাত্ৰ কথা বলিয়া মানবমনোবৃত্তির সমুদ্রবৎ সীমাশূন্যতা চিত্রিত করা, মহাকবির লক্ষণ । ভবভূতির রচনা সেই লক্ষণাক্রোন্ত। পরিতাপের বিষয় এই যে, সে