পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্ৰৌপদী Vet নিশ্চয়তায় পরিণত হইয়াছিল ; ভীমসেনে ইহা বলবৃদ্ধির কারণ হইয়াছিল ; দ্ৰৌপদীতে ইহা ধৰ্ম্মবৃদ্ধির কারণ হইয়াছে । সভাতলে দ্ৰৌপদীর দৰ্প ও তেজস্বিতা আরও বদ্ধিত হইল। তিনি দুঃশাসনকে বুলিলেন, “যদি ইন্দ্ৰাদি দেবগণও তোর সহায় হন, তথাপি রাজপুত্রেরা তোকে কখনই ক্ষমা করিবেন না।” স্বামিকুলকে উপলক্ষ করিয়া সর্বসমীপে মুক্তকণ্ঠে বলিলেন, “ভারতবংশীয়গণের ধৰ্ম্মে ধিক! ক্ষত্ৰধৰ্ম্মজ্ঞগণের চরিত্র একেবারেই নষ্ট হইয়া গিয়াছে।” ভীষ্মাদি গুরুজনকে মুখের উপর তিরস্কার করিয়া বলিলেন, “বুঝিলাম-দ্ৰোণ, ভীষ্ম ও মহাত্মা বিদুরের কিছুমাত্র স্বত্ব নাই।” কিন্তু অবলার তেজ কতক্ষণ থাকে ! মহাভারতের কবি, মনুষ্যচরিত্ৰ-সাগরের তল পৰ্য্যন্ত নখদৰ্পণবৎ দেখিতে পাইতেন। যখন কৰ্ণ দ্রৌপদীকে বেশ্য বলিল, দুঃশাসন তঁাহার পরিধেয় আকর্ষণ করিতে গেল, তখন আর দর্প রহিল না।-- ভয়াধিক্যে হৃদয় দ্রবীভূত হইল। তখন দ্রৌপদী ডাকিতে লাগিলেন, “হা নাথ! হা রমানাথ ! হা ব্ৰজনাথ ! হা দুঃখনাশ ! আমি কৌরবসাগরে নিমগ্ন হইয়াছি—আমাকে উদ্ধার কর।” এস্থলে কবিত্বের চরমোৎকর্ষ • দ্ৰৌপদী স্ত্রীজাতি বলিয়া তাহার হৃদয়ে দৰ্প প্ৰবল, কিন্তু তঁাহার, ধৰ্ম্মজ্ঞানও অসামান্য --যখন তিনি দপিতা রাজমহিষী হইয়া না দাঁড়ান, তখন জনমণ্ডলে তাদৃশী ধৰ্ম্মানুরাগিণী আছে বোধ হয় না। এই প্ৰবল ধৰ্ম্মানুরাগই, প্ৰবলতর দৰ্পের মানদণ্ডের স্বরূপ। এই অসামান্য ধৰ্ম্মানুরাগ, এবং তেজস্বিতার সহিত সেই ধৰ্ম্মানুরাগের রমণীয় সামঞ্জস্য, ধৃতরাষ্ট্রের নিকট র্তাহার বরগ্রহণ কালে অতি সুন্দরীরূপে পরিস্ফুট হইয়াছে। সে স্থানটি এত সুন্দর যে, যিনি তাহা শতবার পাঠ করিয়াছেন, তিনি তাহা আর একবার পাঠ করিলেও অসুখী হইবেন না। এজন্য সেই স্থানটি আমরা উদ্ধত করিলাম। “হিতৈষী রাজা ধৃতরাষ্ট্র দুৰ্য্যোধনকে এইরূপ তিরস্কার করিয়া সাম্বনাবাক্যে দ্রৌপদীকে কহিলেন, হে দ্রুপদতনয়ে! তুমি আমার নিকট স্বীয় অভিলষিত বর প্রার্থনা কর, তুমি আমার সমুদায় বধূগণ অপেক্ষা শ্ৰেষ্ঠ। “দ্রৌপদী কহিলেন, হে ভরতকুলপ্ৰদীপ ! যদি প্ৰসন্ন হইয়া থাকেন, তবে এই বর প্রদান করুন যে, সৰ্ব্বধৰ্ম্মযুক্ত শ্ৰীমান যুধিষ্ঠির দাসত্ব হইতে মুক্ত হউন। আপনার পুত্রগণ যেন ঐ মনস্বীকে পুনরায় দাস না বলে, আর আমার পুত্ৰ প্ৰতিবিন্ধ্য যেন দাসপুত্র না হয় ; কেন না, প্ৰতিবিন্ধ্য রাজপুত্র, বিশেষত: ভূপতিগণকর্তৃক লালিত, উহার দাসপুত্রত হওয়া নিতান্ত অবিধেয়। ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, হে কল্যাণি ! আমি তোমার অভিলােষানুরূপ এই ܬ