পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৯).pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুকরণ * জগদীশ্বরকৃপায়, উনবিংশ শতাব্দীতে আধুনিক বাঙ্গালি নামে এক অদ্ভুত জন্তু এই জগতে দেখা গিয়াছে। পশুতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা পরীক্ষা দ্বারা স্থির করিয়াছেন যে, এই জন্তু বাহ্যতঃ মনুষ্য-লক্ষণাক্রান্ত ; হস্তে পদে পােচ পাঁচ আঙ্গুলি, লাঙ্গুল নাই, এবং অস্থি ও মস্তিষ্ক, “বাইমেনা” জাতির সদৃশ বটে। তবে অন্তঃস্বভাব সম্বন্ধে, সেরূপ নিশ্চয়তা এখনও হয় নাই । কেহ কেহ বলেন, ইহারা অন্তঃসম্বন্ধেও মনুষ্য বটে, কেহ কেহ বলেন, ইহার বাহিরে মনুষ্য, এবং অন্তরে পশু। এই তত্ত্বের মীমাংসা জন্য, শ্ৰীযুক্ত বাবু রাজনারায়ণ বসু। ১৭৯৪ শকের চৈত্র মাসে বক্তৃতা করেন। এক্ষণে তাহা মুদ্রিত করিয়াছেন। তিনি এ বক্তৃতায় পশুপক্ষই সমর্থন করিয়াছেন। আমরা কোন মতাবলম্বী ? আমরাও বাঙ্গালির পশুত্ববাদী। আমরা ইংরেজী সম্বাদপত্র হইতে এ পশুতত্ত্ব অভ্যাস করিয়াছি । কোন কোন তাম্রশাশ্রঞ্চ ঋষির মত এই যে, যেমন বিধাতা ত্ৰিলোকের সুন্দরীগণের সৌন্দৰ্য্য তিল তিল সংগ্ৰহণ করিয়া তিলোত্তমার সৃজন করিয়াছিলেন ; সেইরূপ পশুবৃত্তির তিল তিল করিয়া সংগ্রহপূর্বক এই অপূর্ব নব্য বাঙ্গালিচরিত্র সৃজন করিয়াছেন। শৃগাল হইতে শঠতা, কুকুর হইতে তোষামোদ ও ভিক্ষানুরাগ, মেষ হইতে ভীরুতা, বানর হইতে অনুকরণপটুতা, এবং গৰ্দভ হইতে গর্জন,— এই সকল একত্র করিয়া, দিজুণ্ডল উজ্জলকারী, ভারতবর্ষের ভরসার বিষয়ীভূত, এবং ভট্ট মক্ষমূলরের আদরের স্থল, নব্য বাঙ্গালিকে সমাজাকাশে উদিত করিয়াছেন। যেমন সুন্দরীমণ্ডলে তিলোত্তম, গ্ৰন্থমধ্যে রিচার্ডসন্স সিলেকসান্স, যেমন পোষাকের মধ্যে ফকিরের জামী, মণ্ঠের মধ্যে পঞ্চ, খাদ্যের মধ্যে খিচুড়ি, তেমনি এই মহাত্মাদিগের মতে মনুষের মধ্যে নব্য বাঙ্গালি। যেমন ক্ষীরোদ সমুদ্র মন্থন করিলে চন্দ্ৰ উঠিয়া জগৎ আলো করিয়াছিল— তেমনি পশুচরিত্রসাগর মন্থন করিয়া, এই অনিন্দনীয় বাবু চাদ উঠিয়া ভারতবর্ষ আলো *রিতেছেন। • রাজনারায়ণবাবুর ন্যায়, যে সকল অমৃতলুব্ধ লোক রাহু হইয়া এষ্ট কলঙ্কাশূন্য চাদকে গ্ৰাস করিতে যান, আমরা তঁহাদের নিন্দ করি। বিশেষতঃ রাজনারায়ণপাবুকে বলি যে, আপনিই এই গ্ৰন্থমধ্যে গোমাংসভোজন নিষেধ করিয়াছেন, তবে বাঙ্গালির মুণ্ড খাইতে বসিয়াছেন কেন ?—গোরু হইতে বাঙ্গালি কিসে অপকৃষ্ট ? গোরু ও ܝܚ ܫܒܝܩܝܚܝ ܫܒܩ ܝܫܡܫܫܫܫܡܘܡܫܡܫ- -- --- - •¬

  • সেকাল আর একাল। শ্ৰী রাজনারায়ণ বসু প্ৰণীত ।

S 0