পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ বেদ আমরা পূর্বে বলিয়াছি, সাংখ্যপ্রবচনকার ঈশ্বর মানেন না, বেদ মানেন। বোধ হয়, পৃথিবীতে আর কোন দর্শন বা অন্য শাস্ত্ৰ নাই, যাহাতে ধৰ্ম্মপুস্তকের প্রামাণ্য স্বীকার করে অথচ ধৰ্ম্মপুস্তকের বিষয়ীভূত এবং প্রণেতা জগদীশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। এই বেদাভক্তি ভারতবর্ষে আতিশয় বিস্ময়কর পদাৰ্থ । আমরা এ বিষয়টি কিঞ্চিৎ সবিস্তারে লিখিতে ইচ্ছা করি । মনু বলেন, বেদশব্দ হইতে সকলের নাম, কৰ্ম্ম, এবং অবস্থা নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। বেদ-পিতৃ, দেবতা এবং মনুয্যের চক্ষু ; অশক্য, অপ্রমেয় ; যাহা বেদ হইতে ভিন্ন, তাহা পরকালে নিম্বফল, বেদ ভিন্ন গ্ৰন্থ মিথ্যা। ভূত ভবিষ্যৎ বৰ্ত্তমান, শব্দ স্পর্শ রূপ গন্ধ, চতুৰ্ব্বণ, ত্ৰিলোক, চতুরাশ্রম, সকলই বেদ হইতে প্রকাশ ; বেদ মনুষ্যের পরম সাধন ; যে বেদজ্ঞ, সেই সৈনাপত্য, রাজ্য, দণ্ডনেতৃত্ব এবং সৰ্ব্বলোকাধিপত্যের যোগ্য। যে বেদজ্ঞ, সে যে আশ্রমেই থাকুক না কেন, সেই ব্ৰহ্মে লীন হওয়ার যোগ্য । যাহারা ধৰ্ম্ম-জিজ্ঞাসু, বেদই তাহদের পক্ষে পরম প্রমাণ । বেদ অজ্ঞের শরণ, জ্ঞানীদেরও শরণ। যাহারা স্বৰ্গ বা আনন্ত্যি কামনা করে, ই তাই তাহাদিগের শরণ। যে ব্ৰাহ্মণ তিন লোক হত্যা করে, যেখানে সেখানে খায়, তাহার যদি ঋগ্বেদ মনে থাকে, তবে তাহার কোন পাপ হয় না । শতপথ ব্ৰাহ্মণ বলেন, বেদান্তর্গত সৰ্ব্বভুত ৷ বেদ, সকল ছন্দঃ, স্তোম, প্রাণ, এবং দেবতাগণের আত্মা । বেদই আছে । বেদ অমৃত । যাহা সত্য, তাহাও বেদ । বিষ্ণুপুরাণে আছে, দেবাদির রূপ, নাম, কৰ্ম্ম, প্ৰবৰ্ত্তন, বেদশব্দ হইতে সৃষ্ট হইয়াছিল। অন্যত্র ঐ পুরাণে বিষ্ণুকে বেদময় ও ঋগ যজুঃসামািত্মক বলা হইয়াছে । মহাভারত শান্তিপর্বেও আছে যে, বেদশব্দ হইতে সৰ্ব্বভূতের রূপ নাম কৰ্ম্মান্দির উৎপত্তি । P ঋকসংহিতার ও তৈত্তিরীয় সংহিতার মঙ্গলাচরণে সায়নাচাৰ্য্য ও মাধবাচাৰ্য্য লিখিয়াছেন, “বেদ হইতে অখিল জগতের নিৰ্ম্মাণ হইয়াছে।” এইরূপ সর্বত্র বেদের মাহাত্ম্য। কোন দেশে কোন ধৰ্ম্মগ্রন্থের, বাইবেল, কোরাণ প্রভৃতি কিছুরই ঈদৃশ মহিমা কীৰ্ত্তিত হয় নাই। এখন জিজ্ঞাস্য এই যে, যে বেদ এইরূপ সকলের পূর্বগামী বা উৎপত্তির মূল, তাহা কোথা হইতে আসিল । এ বিষয়ে মতভেদ আছে। কেহ কেহ বলেন, বেদের কর্তা কেহ নাই।--এ গ্ৰন্থ কাহারও প্রণীত নহে, ইহা নিত্য এবং অপৌরুষেয় । অন্যে বলেন