পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NV) বিবিধ প্ৰবন্ধ-দ্বিতীয় ভাগ যাহারা নীচ, তাহারা যাহা ইচ্ছা বলিবেন, আমরা ক্ষতি বিবেচনা করিব না। র্যাহারা মহৎ, তাহারা আমাদিগকে ভ্ৰান্ত বালয় মার্জনা করিবেন,-এই ভিক্ষা। আমরা জানিয়া শুনিয়া কোন অযথার্থ্যেক্তি করিব না। বরং আমাদিগের ভ্ৰম দেখাইয়া দিলে, কৃতজ্ঞ হইয়া তাহা স্বীকার করিব । যতক্ষণ না সে ভ্ৰম দেখিব, ততক্ষণ যাহা বলিব, মুক্তকণ্ঠেই बलिद । আমাদিগের বিশেষ বক্তব্য এই, আমরা যাহা বলিতেছি, তাহা “জমীদার সম্প্রদায় সম্বন্ধে বলিতেছি না। যদি কেহ বলেন, জমীদার মাত্ৰেই দুরাত্মা বা অত্যাচারী, তিনি নিতান্ত মিথ্যাবাদী। অনেক জমীদার সদাশয়, প্ৰজাবৎসল, এবং সত্যনিষ্ঠ । সুতরাং র্তাহাদিগের সম্বন্ধে এই প্ৰবন্ধপ্ৰকাশিত কথাগুলি বৰ্ত্তে না । কতকগুলি জমীদার অত্যাচারী ; তঁহারা এই প্ৰবন্ধের লক্ষ্য । আমরা সংক্ষেপের জন্য এ কথা আগেই বলিয়া রাখিলাম । যেখানে জমীদার বলিয়াছি বা বলিব, সেইখানে ঐ অত্যাচারী জমীদারগুলিই বুঝাইবে । পাঠক মহাশয় ‘জমীদার সম্প্রদায়’ বুঝিবেন না । বাঙ্গালী কৃষক যাহা ভূমি হইতে উৎপন্ন করে, তাহা কিছু অধিক নহে । তাহা হইতে প্ৰথমতঃ চাষের খরচ কুলাইতে হয় । তাহা অল্প নহে ; বীজের মূল্য পোমাইতে হইবে, কৃষাণের বেতন দিতে হইবে, গোরুর খোরাক আছে ; এ প্রকার অন্যান্য খরচও আছে । তাহা বাদে যাহা থাকে, তাহা প্ৰথমে মহাজন আটক করে । বর্ষাকালে ধার করিয়া খাইয়াছে, মহাজনকে তাহা পরিশোধ করিতে হইবে । কেবল পরিশোধ নহে, দেড়ী সুন্দ দিতে হইবে । শ্রাবণ মাসে দুই বিশ ধান লইয়াছে বলিয়া, পৌষ মাসে তিন বিশ দিতে হইবে । যাহা রহিল, তাহা অল্প । তাহা হইতে জমীদারকে খাজান দিতে হইবে । তাহা দিল। পরে যাহা বাকি রহিল—অল্পাবশিষ্ট, অল্প খুদের খুদ, চব্বিত ইক্ষুর রস, শুষ্ক পন্সলের মৃত্তিকাগত বারি—তাহাতে আতি কষ্টে দিনপাত হইতে পারে, অথবা দিনপাত হইতে পারে না । তাহাই কি কৃষকের সরে যায় ? পাঠক মহাশয় দেখুন।-- পৌষ মাসে ধান কাটিয়াই কৃষকে পৌষের কিস্তি খাজানা দিল । কেহ কিস্তি পরিশোধ করিল-কাহারও বাকি রহিল। ধান পালা দিয়া, আছড়াইয়া, গোলায় তুলিয়া, সময়মতে হাটে লহিয়া গিয়া, বিক্রয় করিয়া, কৃষক সহাৎসরের খাজানা পরিশোধ করিতে চৈত্র মাসে জমীদারের কাছারিতে আসিল । পরাণ মণ্ডলের পৌষের কিস্তি পাঁচ টাকা ; চারি টাকা দিয়াছে, এক টাকা বাকি আছে । আর চৈত্রের কিস্তি তিন টাকা । মোটে চারি টাকা সে দিতে আসিয়াছে । গোমস্ত হিসাব করিতে বসিলেন । হিসাব করিয়া বলিলেন, “তোমার পৌষের কিস্তির তিন টাকা বাকি আছে।” পরাণ মণ্ডল আনেক চীৎকার করিল। --দোহাই পাড়িল-হয় তা দাখিলা দেখাইতে পারিল, নয় তা না । হয় তা গোমস্ত দাখিলা