পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

80 বিবিধ প্ৰবন্ধ অতএব সৌন্দৰ্য্য সৃষ্টিই কাব্যের মুখ্য উদ্দেশ্য। সৌন্দৰ্য্য অর্থে কেবল বাহ প্ৰকৃতির বা শারীরিক সৌন্দৰ্য্য নহে। সকল প্রকারোয় সৌন্দৰ্য্য বুঝিতে হইবেক । যাহা স্বভাবানুকারী নহে, তাহাতে কুসংস্কারাবিষ্ট লোক ভিন্ন কাহারও মন মুগ্ধ হয় না। এ জন্য স্বভাবানুকারিতা সৌন্দর্যের একটি গুণ মাত্ৰ-স্বভাবানুকারিতা ছাড়া সৌন্দৰ্য্য। জন্মে না। তবে যে আমরা স্বভাবানুকারিতা - এবং সৌন্দৰ্য্য দুইটি পৃথক গুণ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছি, তাহার কারণ, সৌন্দৰ্য্যের অনেক অর্থ প্রচলিত আছে । আর একটি কথা বুঝাইলেই হয়। এই জগৎ ত সৌন্দৰ্য্যময়-তাহার প্রতিকৃতি-- মাত্ৰই সৌন্দৰ্য্যময় হইবে । তবে কেন আমরা উপরে বলিয়াছি যে, যাহা প্ৰকৃতির প্রতিকৃতি মাত্র, সে সৃষ্টিতে কবির তাদৃশ গৌরব নাই ? তাহার কারণ, সে কেবল প্ৰতিকৃতি অনুলিপি মাত্ৰ-তাহাকে “সৃষ্টি” বলা যায় না। যাহা সতের প্রতিকৃতি মাত্র নহে— তাহাই সৃষ্টি । যাহা স্বভাবানুকারী, অথচ স্বভাব্যাতিরিক্ত, তাহাই কবির প্রশংসনীয় সৃষ্টি । তাহাতেই চিত্ত বিশেষরূপে আকৃষ্ট হয় । যাহা প্ৰকৃত, তাহাতে তাদৃশ্য চিত্ত আকৃষ্ট হয় না। কেন না, তাহা অসম্পূর্ণ, দোষসংস্পষ্ট, পুরাতন, এবং অনেক সময়ে অস্পষ্ট । কবির সৃষ্টি র্তাহার স্বেচ্ছাধীন-সুতরাং সম্পূৰ্ণ, দোষশূন্য, নবীন, এবং স্পষ্ট হইতে পারে। এইরূপ যে সৌন্দৰ্য্যসৃষ্টি কবির সর্বপ্রধান গুণ-সেই অভিনব, স্বভাবানুকারী, স্বভাব্যাতিরিক্ত সৌন্দৰ্য্যসৃষ্টি-গুণে, ভারতবষীয় কবিদিগের মধ্যে বাল্মীকি এবং মহাভারতকার প্রধান। এক এক কাব্যে ঈদৃশ সৃষ্টিবৈচিত্ৰ্য প্রায় জগতে দুর্লভ। ” এ সম্বন্ধে ভবভূতির স্থান কোথায় ? তাহা তাহার তিনখানি নাটক পৰ্য্যালোচিত না করিলে অবধারিত করা যায় না। তাহ আমাদিগের উদেশ্য নহে। কেবল উত্তরচরিত দেখিয়া ভঁাহাকে অতি উচ্চাসন দেওয়া যায় না। উত্তরচরিতে ভবভূতি অনেক দূর পর্য্যন্ত বাল্মীকির অনুবত্তী হইতে বাধ্য হইয়াছেন, সুতরাং তঁাহার সৃষ্টিমধ্যে নবীনত্বের অভাব, এবং সৃষ্টিচাতুৰ্য্যের প্রচার করিবার পথও পান নাই । চরিত্র সৃজন সম্বন্ধে ইহা বলা যাইতে পারে যে, রাম ও সীতা ভিন্ন কোন নায়ক নায়িকার প্রাধান্য নাই । সীতা, রামায়ণের সীতার প্রতিকৃতি মাত্র। রামের চরিত্র, রামায়ণের রামের চরিত্রের উৎকৃষ্ট প্রতিকৃতিও নহে-ভবভূতির হস্তে সে মহচ্চিত্র যে বিকৃত হইয়া গিয়াছে, তাহা পূর্বেই প্ৰতিপন্ন করা গিয়াছে। সীতাও র্তাহার কাছে, অপেক্ষাকৃত পরসাময়িক স্ত্রীলোকের চরিত্র কতক দূর পাইয়াছেন । তাই বলিয়া এমত বলা যায় না যে, উত্তরচরিতে চরিত্রসৃষ্টি-চাতুৰ্য্য কিছুই লক্ষিত হয় না। বাসন্তী ভবভূতির অভিনব সৃষ্টি বটে, এবং এ চরিত্র অত্যন্ত মনোহর। আমরা বাসন্তীর চরিত্রের সবিশেষ পরিচয় দিয়াছি, সুতরাং তৎসম্বন্ধে আর বিস্তারের আবশ্যক