পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গীতিকাব্য 8ዊ ভবভূতি তৎক্ষণাৎ তাহা লেখনীমুখে ধূত করিয়া লিপিবদ্ধ করিয়াছেন; ব্যক্তিব্য এবং অব্যক্তব্য উভয়ই তিনি স্বকৃত নাটকমধ্যগত করিয়াছেন । ইহাতে নাটকোচিত কাৰ্য্য না করিয়া গীতিকাব্যাকারের অধিকারে প্রবেশ করিয়াছেন । বাল্মীকি তাহা না করিয়া কেবল রামের কাৰ্য্যগুলিই বাণিত করিয়াছেন, এবং তত্তৎ কাৰ্য্য সম্পাদনার্থ যতখানি ভাবব্যক্তি আবশ্যক, তাহাই ব্যক্ত করিয়াছেন। ভবভূতিকৃত ঐ রামবিলাপের সঙ্গে ডেসডিমোনা বধের পর ওথেলোর বিলাপের বিশেষ করিয়া তুলনা করিলেও এ কথা বুঝা যাইবে । সেক্ষপীয়র এমত কোন কথাই তৎকালে ওথেলোর মুখে ব্যক্ত করেন নাই, যাহা তৎকালীন কাৰ্য্যাৰ্থ বা অন্যের কথার উত্তরে ব্যক্ত করা প্রয়োজন হইতেছে না । ব্যক্তিব্যের অতিরেকে তিনি এক রেখাও যান নাই। তিনি ভবভূতির ন্যায় নায়কের হৃদয়ানুসন্ধান করিয়া, ভিতর হইতে এক একটি ভাব টানিয়া আনিয়া, একে একে গণনা করিয়া, সারি দিয়া সাজান নাই । অথচ কে না বলিবে যে, রামের মুখে যে দুঃখ ভবভূতি ব্যক্ত করিয়াছেন, তাহার সহস্ৰ গুণ দুঃখ সেক্ষপীয়র ওথেলোর মুখে ব্যক্ত করাইয়াছেন । সহজেই অনুমেয় যে, যাহা ব্যক্তিব্য, তাহ পর সম্বন্ধীয় বা কোন কাৰ্য্যোদিষ্ট, যাহা অব্যক্তব্য, তাহা আত্মচিত্ত সম্বন্ধীয় ; উক্তি মাত্র তাহার উদ্দেশ্য । এরাপ কথা যে নাটকে একেবারে সন্নিবেশিত হইতে পারে না, এমত নহে, বরং অনেক সময়ে হওয়া আবশ্যক । কিন্তু ইহা কখন নাটকের উদ্দেশ্য হইতে পারে না, নাটকের যাহা । উদ্দেশ্য, তাহার আনুষঙ্গিকতাবশতঃ প্রয়োজন মত কদাচিৎ সন্নিবেশিত হয় ।