পাতা:বিবিধ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৫৯).pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.ግ8 বিবিধ প্ৰবন্ধ করিয়াছি, তাহাতে বৈচিত্ৰ্যই সুখ । অনুকরণে এই সুখের ধ্বংস হয়। মাকবেথ উৎকৃষ্ট নাটক, কিন্তু পৃথিবীর সকল নাটক মাকবেথের অনুকরণে লিখিত হইলে, নাটকে আর কি সুখ থাকিত ? সকল মহাকাব্য রঘুবংশের আদর্শে লিখিত হইলে, কে আর কাব্য পড়িত ? দ্বিতীয়, সকল বিষয়েই যত্নপৌনঃপুন্যে উৎকর্ষের সম্ভাবনা। কিন্তু পরবত্তী কাৰ্য্য পূর্ববৰ্ত্তী কাৰ্য্যের অনুকরণ মাত্র হইলে, চেষ্টা কোন প্রকার নূতন পথে যায় না ; সুতরাং কাৰ্য্যের উন্নতি ঘটে না । তখন ধারাবাহিকতা প্ৰাপ্ত হইতে হয় । ইহা কি শিল্প সাহিত্য বিজ্ঞান, কি সামাজিক কাৰ্য্য, কি মানসিক অভ্যাস, সকল সম্বন্ধেই সত্য । মনুষ্যের শারীরিক ও মানসিক বৃত্তি সকলেরই সামাকালিক যথোচিত স্মৃৰ্ত্তি এবং উন্নতি মনুষ্যদেহ ধারণের প্রধান উদ্দেশ্য। তবে যাহাতে কতকগুলির অধিকতর পরিপুষ্টি, এবং কতকগুলির প্রতি তাচ্ছিল্য জন্মে, তাহা মনুষ্যের অনিষ্টকর। মনুষ্য অনেক, এবং একজন মানুষ্যের সুখও বহুবিধ। তত্তাবৎ সাধনের জন্য বহুবিধ ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের কাৰ্য্যের আবশ্যকতা । ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের কাৰ্য্য ভিন্ন ভিন্ন প্ৰকৃতির লোকের দ্বারা ভিন্ন সম্পন্ন হইতে পারে না । এক শ্রেণীর চরিত্রের লোকের দ্বারা, বহু প্রকারের কাৰ্য্য সাধিত হইতে পারে না। অতএব সংসারে চরিত্রবৈচিত্র্য, কাৰ্যবৈচিত্ৰ্য, এবং প্রবৃত্তির বৈচিত্ৰ্য প্রয়োজন। তদ্ব্যতীত সমাজের সকল বিষয়ে মঙ্গল নাই ! অনুকরণ প্ৰবৃত্তিতে ইহাই ঘটে যে, অনুকারীর চরিত্র, তাহার প্রবৃত্তি, এবং তাহার কার্য্য, অনুকরণীয়ের ন্যায় হয়, পথান্তরে গমন করিতে পারে না । যখন সমাজস্থ সকলেই বা অধিকাংশ লোক বা কাৰ্য্যক্ষম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ, একই আদর্শের অনুকারী হয়েন, তখন এই বৈচিত্র্যহানি অতি গুরুতর হইয়া উঠে। মনুষ্য-চরিত্রের সর্বাঙ্গীন স্মৃৰ্ত্তি ঘটে না ; সৰ্ব্বপ্রকারের মনোবৃত্তি সকলের মধ্যে, যথোচিত সামঞ্জস্য থাকে না, সর্বপ্রকারের কাৰ্য্য সম্পাদিত হয় না, মনুষ্যের কপালে সকল প্রকার সুখ ঘটে না-মনুষ্যত্ব অসম্পূর্ণ থাকে, সমাজ অসম্পূর্ণ থাকে, মনুষ্যজীবন অসম্পূর্ণ থাকে । আমরা যে কয়টি কথা বলিয়াছি, তাহাতে নিম্নলিখিত তত্ত্বসকলের উপলব্ধি হইতে 外忆颈一 ১ । সামাজিক সভ্যতার আদি দুই প্রকার ; কোন কোন সমাজ স্বতঃ সভা হয়, কোন কোন সমাজ অন্যত্র হইতে শিক্ষা লাভ করে। প্রথমোক্ত সভ্যতা লাভ বহুকালসাপেক্ষ ; দ্বিতীয়োক্ত আশু সম্পন্ন হয়। ২ । যখন কোন অপেক্ষাকৃত অসভ্য জাতি, সভ্যতার জাতির সংস্পৰ্শ লাভ করে, তখন দ্বিতীয় পথে সভ্যতা অতি দ্রুতগতিতে আসিতে থাকে। সে স্থলে সামাজিক গতি