পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
বিবিধ কথা

হয় নাই। আমরা ধর্ম্ম বলিতে ব্যক্তিগত মোক্ষসাধনার আদর্শই বুঝি; এই মোক্ষলাভের সাধনায় ব্যক্তির অধিকারভেদ মানি। প্রত্যেক জীবই কর্ম্ম অনুসারে অন্য হইতে স্বতন্ত্র, অতএব সাধন-মন্ত্র সকলের পক্ষে এক হইতে পারে না। মানুষমাত্রেই এক ধর্ম্ম-পরিবারভুক্ত বটে, কিন্তু তুল্যাধিকারসম্পন্ন নয়; একই গোষ্ঠীপতি ভগবানের সন্তান বলিয়া সকলেই একই সত্যের অধিকারী—এ ধারণা আমাদের নিকট নিতান্তই হাস্যকর। অধিকারভেদে একই সত্যের নানা রূপ—কোনটাই মিথ্যা নহে; মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতিহিসাবে যাহার যতটুকু অধিকার তাহাই তাহার পরম সত্য। এই তত্ত্বের আধ্যাত্মিক মর্ম্ম যতই গভীর হউক—এ আদর্শের মূলে যত গভীর সত্যই নিহিত থাক, ইহার ফলে যে সমাজ-ব্যবস্থার উদ্ভব হইয়াছে, তাহাতে সামাজিক নীতি-সত্যের সম্যক মর্য্যাদা রক্ষিত হয় নাই। যতদিন বাহিরের সঙ্গে সংঘাত গুরুতর হইয়া উঠে নাই—অহিন্দু সেমীয় সভ্যতার সহিত সংঘর্ষ ঘটে নাই, ততদিন এই বাস্তব-স্পর্দ্ধী অধ্যাত্ম-সাধনা কতকটা নির্ব্বিঘ্নেই চলিয়াছিল। কিন্তু পরে, বিধর্ম্মের প্রচণ্ড আঘাতে, বিজাতির প্রবলতর রাষ্ট্রীয় শক্তির উৎপাতে, যখন এ জাতির দুর্ব্বলতা প্রকাশ পাইল, তখন এই ধর্ম্ম বাহিরের জীবন ও সামাজিক নীতি-সত্যকে পাশ কাটাইয়া গুহ্য তান্ত্রিক সাধনমার্গে আত্মগোপন করিল; যে ধর্ম্ম সমাজকে ধরিয়া রাখে তাহার প্রতি উদাসীন হইয়া—আমরা জীবনে মিথ্যাচারী, এবং ধর্ম্মসাধনায় আধ্যাত্মিক হইয়া উঠিলাম।

 ইহার পর যাহা ঘটিল তাহা সকলেই জানেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর আরম্ভ হইতেই আমরা নিজেদের দুর্গতি সম্বন্ধে ক্রমশ সচেতন হইয়া উঠিলাম—যে সঙ্কট সম্বন্ধে এতদিন আমাদের কোনও চৈতন্যই ছিল না,