পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আচার্য্য কেশবচন্দ্র ও বাংলার নবযুগ
৮৯

তাহাই মর্ম্মান্তিক রূপে উপলব্ধি করিলাম। ইংরেজী সাহিত্য ও ইংরেজ চরিত্রের সংস্পর্শে আসিয়া আমরা সবচেয়ে বেশি করিয়া বুঝিলাম আমাদের নৈতিক দীনতা, জাতীয় চরিত্রের শোচনীয় অবনতি, বৃহৎকে ত্যাগ করিয়া ক্ষুদ্রের প্রতি আসক্তির জন্য আত্মার জড়তা। ইংরেজী শিক্ষা রীতিমত আরম্ভ হইবারও পূর্ব্বে এ চেতনা বাঙালীকে অধিকার করিয়াছে, নিজেদের হীন অবস্থার জন্য লজ্জিত হইবার মত আত্মজ্ঞান তাহার হইয়াছে। পুরাতন রাষ্ট্র-ব্যবস্থার উচ্ছেদে, এবং নূতন বিদেশী শক্তির সহিত কর্ম্মক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের ফলে, বাঙালী আবার ভাবিতে আরম্ভ করিল—এই ভাবনাই তাহার সুপ্ত মনীষা জাগাইল। কারণ, বাঙালী চরিত্রবলে যতই হীন হউক, তাহার ভাবগ্রাহিতা-শক্তি অসাধারণ, যুগান্তরের ভাব-সত্যকে সে অবিলম্বে জ্ঞান-গোচর করিতে পারে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাক্কালেই বাঙালী বুঝিতে সুরু করিল, যুগ-প্রয়োজন কি। রাজা রামমোহন রায় বাঙালীর হইয়া সর্ব্বপ্রথমে এ সম্বন্ধে সচেতন হইয়াছিলেন। ধর্ম্মের যে অপর অর্থ আমি ইতিপূর্ব্বে আপনাদের নিকটে উল্লেখ করিয়াছি, সেই অর্থে রামমোহন একটা ধর্ম্মের আবশ্যকতা অনুভব করিয়াছিলেন। বিচারবুদ্ধির তীক্ষ্ণ অস্ত্রাঘাতে, জাতির মনোভূমি হইতে সকল অন্ধবিশ্বাস, এবং ধর্ম্মসাধনার ক্ষেত্র হইতে সর্ব্বপ্রকার তন্ত্রমন্ত্র বা অলৌকিক অনুভূতির চর্চ্চা দূর করিয়া, তিনি একটি যুক্তিসম্মত, নীতিমূলক ধর্ম্ম দেশবাসীর জন্য প্রণয়ন করিতে চাহিয়াছিলেন। রামমোহনের এই উদ্যম ও তাহার অন্তর্গত অভিপ্রায় আজিও কেহ বুঝিতে সক্ষম বা সম্মত হয় নাই। রামমোহন যে একেশ্বরবাদের পক্ষপাতী ছিলেন, পারলৌকিক কল্যাণচিন্তাই তাহার মুখ্য কারণ নয়; সাধু-সন্ত বা ভক্তভাগবতগণ যে শ্রেণীর ধার্ম্মিক, রামমোহন নিজে সেরূপ