পাতা:বিবিধ কথা.djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
বিবিধ কথা

পুরুষের মত অটল অবিচলিতভাবে নিজের মনের মত জীবন যাপন করিয়াছিলেন, দেখিতে পাই। এই বীরমূর্ত্তি কোন সাধু, দরবেশ বা ভক্ত সন্ন্যাসীর মূর্ত্তি নহে। রামমোহনের যে অসাধারণ মনস্বিতা আমাদের বিস্ময় উৎপাদন করে, তাহাও, নব্যন্যায়ের স্রষ্টা বাঙালী ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতের পক্ষে কিছুমাত্র অসম্ভব নহে। এই যে রামমোহন, ইঁহার পরিচয় সাম্প্রদায়িক ধর্ম্ম-কোলাহলে আচ্ছন্ন হইয়া আছে। রামমোহন বাঙালীর বরণীয় বটেন, কিন্তু কোনও ধর্ম্ম বা সম্প্রদায়-প্রতিষ্ঠার জন্য নয়—রামমোহনই এ যুগে সর্ব্বপ্রথম জাতির জড়বুদ্ধিকে সবলে আঘাত করিয়াছিলেন, স্বাধীন জ্ঞান-বুদ্ধির ক্ষেত্রে জনমনকে প্রবুদ্ধ করিতে চাহিয়াছিলেন।

 কিন্তু রামমোহনের চেষ্টা ফলবতী হয় নাই, ইহাও সত্য। তাঁহার বাণীকে এ জাতি জীবনের মধ্যে পায় নাই। আজ রামমোহনকে লইয়া আমরা যে গৌরব করিতেছি, তাঁহার স্মৃতিপূজার যে সাড়ম্বর আয়োজনে মাতিয়াছি, তাহার আরও সঙ্গত কারণ থাকিলে ভাল হইত। তাঁহার জীবন বা তাঁহার আদর্শ কোথাও সাক্ষাৎ ভাবে জাতিকে প্রভাবিত করে নাই, শতাব্দীব্যাপী সংগ্রামে আমাদের হৃদয়ের বলবৃদ্ধি করে নাই। তাঁহার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে রামমোহনের নামে যে নূতন ধর্ম্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত হইল, তাহার মন্ত্রও ঠিক রামমোহনের মন্ত্র নয়; সে সমাজ এক অভিজাত জ্ঞানী-সম্প্রদায়রূপে অচল হইয়া রহিল। কিন্তু নবযুগ বসিয়া ছিল না, বাঙালীর চিত্তক্ষেত্রে পাশ্চাত্য শিক্ষার হলকর্ষণ বন্ধ হয় নাই; বরং আরও গভীরভাবে সেই খনন কার্য্য চলিতে লাগিল। ইহারই ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কেশবচন্দ্র সেন নামে আর এক বাঙালীর অভ্যুদয় হইল। কেশবের ধর্ম্ম-জীবনের উৎপত্তি ও বিকাশ এ যুগের পক্ষে আকস্মিক নয়, বরং সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। কেশবচন্দ্রের