জাতির বহুকালসঞ্চিত পাপের পরিণাম-চিন্তা তাঁহাকে ব্যাকুল করিয়াছিল। বৈষ্ণবকুলে জন্মগ্রহণ করিয়া তিনি প্রকৃতিতে বৈষ্ণব ছিলেন; কিন্তু চৈতন্য-প্রবর্ত্তিত ধর্ম্মে পাপ ও পাপমুক্তির তত্ত্ব গ্রাহ্য হইলেও, সে ধর্ম্মের সাধনায় আর সে সরলতা ছিল না, জটিল রসতত্ত্ব ও নানা তান্ত্রিক সাধন-পদ্ধতির দ্বারা তাহা আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। কেশব বুঝিয়াছিলেন, মানুষকে মানুষহিসাবেই উন্নত হইতে হইলে ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ ব্যক্তি-সম্বন্ধ স্থাপন করিতে হইবে, সহজ স্বাভাবিক মানবীয় চেতনাকে অতিক্রম করিলে চলিবে না। সে সম্বন্ধ আপামরসাধারণের পক্ষে একই ভাবে ও একই কারণে সহজ হওয়া চাই। এই সম্বন্ধস্থাপনের উপায়—জ্ঞান নয়, ধ্যান নয়, গুরুদীক্ষাও নয়—প্রার্থনা। এই প্রার্থনাই গুরু—ভগবান ও মানুষের মধ্যে সহজ যোগস্থাপনের একমাত্র সেতু। এই প্রার্থনার উপযোগী চিত্তের অবস্থা— পাপ-বোধ, দুর্ব্বল অসহায় মানুষের ভয়-ব্যাকুলতা। চিত্তের এই অবস্থা ও এই প্রার্থনা-তত্ত্ব কেশবের জীবনে স্বতঃস্ফূর্ত্ত হইয়াছিল, পূর্ব্ব হইতেই তাঁহার মনকে খ্রীষ্ট্রীয় সাধন-পদ্ধতির অনুকূল করিয়াছিল। কেশবের নীতি-নিষ্ঠায় ভক্তের আত্মসমর্পণ ছিল, যুক্তিবাদীর অহঙ্কার ছিল না। প্রথম হইতেই এই নৈতিক চিত্তশুদ্ধির প্রয়োজন তিনি অনুভব করিয়াছিলেন, তাই খ্রীষ্টীয় সাধুর উক্তি—“Repent ye, for the Kingdom of Heaven is at hand”—তাঁহাকে এমন গভীর ভাবে বিচলিত করিয়াছিল।
কেশব রামমোহন-পন্থী ছিলেন না—ইহার পরেও তাহা বলা বোধ হয় নিষ্প্রয়োজন। কেশব সজ্ঞানে ভক্তি-সাধনা করিতেন বটে—প্রচারক কেশব তাঁহার নব ধর্ম্ম-মন্দিরের ভিত্তিমূলে সদাজাগ্রত জিজ্ঞাসাকে স্থান দিয়াছিলেন বটে, কিন্তু মন্দিরের অভ্যন্তরে তিনি বিশ্বাসকেই