ধর্ম্মনীতি কতদূর সাফল্যলাভ করিতে পারে, কেশবের আজন্ম সাধনার পরিণাম লক্ষ্য করিলেই তাহা বুঝা যায়।
কেশবচন্দ্রের ধর্ম্মজীবনের যে তৃতীয় লক্ষণটির কথা বলিয়াছি, তাহা এই যে, ধর্ম্মবিষয়ে কেশব মতবাদী না হইয়া ভাবগ্রাহী ছিলেন—নিজ হৃদয়ের বিকাশকামনায় তিনি সর্ব্বমত ও সর্ব্বতন্ত্র হইতে সুপথ্য সংগ্রহ করিতেন; ভাবুক ভাবপ্রবণ কেশব ধর্ম্মপ্রেরণার ক্ষেত্রে একরূপ কবি ছিলেন। তাঁহার প্রাণের মধ্যে নিরন্তর একটি ভাবাগ্নি প্রজ্জ্বলিত ছিল, তাহাতে তিনি কখনও কোথায়ও সাধনজীবনে স্থাণু হইয়া থাকিতে পারিতেন না। তিনি তাঁহার ‘জীবন-বেদ’ নামক গ্রন্থের এক প্রসঙ্গে বলিতেছেন—
হে আত্মন্! ধর্ম্মজীবনের বাল্যকালে কি মন্ত্রে দীক্ষিত হইয়াছিলে? আত্মা উত্তর দেয়, অগ্নিমন্ত্রে। আমি অগ্নিমন্ত্রের উপাসক, অগ্নিমন্ত্রেরই পক্ষপাতী। অগ্নিমন্ত্র কি? শীতলতা বুঝিতে হইলে উত্তাপ বুঝিতে হয়।
কি মনের চারিদিকে, কি সামাজিক অবস্থার চারিদিকে সততই উৎসাহের অগ্নি জ্বালিয়া রাখিতাম। একদলের কাছে সেবা করিলাম, আর একটি দল কবে হইবে; দশটি দল প্রস্তুত করিলাম, আর দশটি দল কবে প্রস্তুত করিব; কতকগুলি লোকের সহিত আলাপ করিলাম, আর কতকগুলি লোকের সঙ্গে কিসে আলাপ করিতে পারিব; কতকগুলি শাস্ত্র সঙ্কলন করিয়া সত্য সংগ্রহ করিলাম, পাছে সেই সত্যগুলি লইয়া থাকিলে সেগুলি পুরাতন হইয়া পড়ে, এই জন্য অপর কতকগুলি পড়িয়া সত্য সংগ্রহ করিব, কেবল এই চেষ্টাই ছিল। ইহাই উত্তাপের অবস্থা।
এই যে উত্তাপের অবস্থা, ইহাই কেশব-চরিত্রের সর্ব্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য। জ্ঞানবুভুক্ষা ও ভক্তিরসের নিয়ত উচ্ছ্বাস, একই জীবনে এই দুইয়ের