শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ
প্রথম প্রসঙ্গ—শ্রীরামকৃষ্ণ
১
ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের মানবত্বের কথা—তাঁহার মানব-প্রেমের কথা ভাবিতেছিলাম। এই প্রেম জগতে অনেকবার শরীরী হইয়া দেখা দিয়াছে, কিন্তু এবার তাহাতে কিছু নূতনত্ব আছে। বুদ্ধ জগতের প্রথম প্রেমিক; জীবদুঃখে কাতর হইয়া তিনি এই দুঃখের নিদান ও তাহার আত্যন্তিক উচ্ছেদের যে উপায় আবিষ্কার করিয়াছিলেন, তাহাতে এই জন্ম-জরা-মৃত্যুর সংসারকে অসার বুঝিয়া আত্মারও উচ্ছেদসাধন পরম পুরুষার্থ বলিয়া নির্দ্ধারিত হইয়াছিল; তাঁহার মতে সৃষ্টি শুধু যে ‘মিথ্যাভূতা’ তাহা নয়, তাহা ‘সনাতনী’ও নয়—দ্বৈত অদ্বৈতের কোনটাই তত্ত্ব নয়; আত্যন্তিক দুঃখনিবৃত্তির জন্য সকল সংস্কারের নির্ব্বাণ-সাধনাই একমাত্র পন্থা। বুদ্ধ যত বড় প্রেমিক, তত বড় সন্ন্যাসী। এই বাণী মানুষের অহঙ্কার-নাশে সহায়তা করিয়াছিল, এবং ইহারই প্রেরণায় জীবনের মহত্তর আদর্শ, মনুষ্যত্বের বৃহত্তর আশ্বাস, একদা ভারতীয় সমাজে নবজীবন সঞ্চার করিয়াছিল। কিন্তু আত্মা মরে নাই, বরং এই উন্মাদনার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে আত্মা ও অনাত্মার দেহতত্ত্বকে আরও কঠিনভাবে স্বীকার করিতে হইয়াছিল। অনাত্মার উপরে আত্মাকে প্রতিষ্ঠিত করিবার প্রয়োজন গুরুতর হইয়া উঠিয়াছিল। অতঃপর ভারতের বাহিরে জগতের দ্বিতীয় প্রেমিক খ্রীষ্ট, এবং ভারতের ভিতরে কোনও মহাপুরুষ, ভাগবত প্রেম-ধর্ম্মের