মহিমা ঘোষণা করিলেন। শঙ্করের অদ্বৈত-আত্মতত্ত্বের আস্তিকতা বৌদ্ধ শূন্যবাদ নিরসন করিলেও, মানুষের প্রাণ সেই উত্তুঙ্গ তুষারশিখরবিচ্ছুরিত শীতল জ্যোতির আশ্বাসে আশ্বস্ত হইতে পারে নাই। এই ভাগবত ধর্ম্মেরই নানা মন্ত্র মানুষের দুঃখনিবৃত্তির সাধনোপায় হইয়াছিল। তথাপি এক দিকে জ্ঞান ও অপর দিকে প্রেম, এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব চিরকাল মানুষের অধ্যাত্মচেতনায় জাগিয়া রহিল। মাত্র একবার ভারতীয় হিন্দু-প্রতিভার উৎকৃষ্ট-নিদর্শন-স্বরূপ গীতোক্ত কর্ম্মসন্ন্যাসবাদে এই দ্বন্দ্ব সমাধানের এক অপূর্ব্ব পন্থা উঁকি দিয়াছিল—বুদ্ধপ্রচারিত ধর্ম্মনীতির এক নূতন অর্থবাদ হইতেই এই কর্ম্মসন্ন্যাস-মন্ত্রের উদ্ভব হইয়াছিল বলিয়া মনে হয়।
কিন্তু তথাপি সমস্যার মূল যেন দৃষ্টির বাহিরেই রহিয়া গেল। খ্রীষ্টের ভক্তি-ধর্ম্ম, বৈষ্ণবের জ্ঞানভক্তিবাদ—দ্বৈত এবং বিশিষ্টাদ্বৈত— কিছুতেই মানুষের মনুষ্যত্ব-বোধ পরিতৃপ্ত হয় নাই; যুগবিশেষের যুগধর্ম্মরূপে এই সকল উপদেশ যতই কার্য্যকরী হউক, যুগান্তরের ক্রমবর্দ্ধমান মানবীয় চৈতন্যে যে আধ্যাত্মিক সঙ্কট ঘনীভূত হইয়া উঠিতেছে, মানুষের দেহমন যে তীব্রতর চেতনায় অশান্ত হইয়া উঠিতেছে, তাহাতে খ্রীষ্টের—“Render unto Caesar what is Caeser’s due”—এই নীতি অনুযায়ী সংসারের সঙ্গে তেমন সহজ বোঝাপড়া আর সম্ভব নহে। আধ্যাত্মিক সঙ্কট অপেক্ষা আধিভৌতিক সঙ্কটই এখন মানুষকে এমন কোণঠেসা করিয়াছে যে, ইহকালই তাহার সর্ব্বস্ব হইয়া উঠিয়াছে; অথচ তাহাতেও বাঁচিবার আশা নাই। আজ যে ভগবৎ-মুখী হইয়া বসিয়া থাকে, সে হয় ক্লীব, নয় অন্ধ। মধ্যযুগের আদর্শ আজ অচল। অথচ ধর্ম্মহীন হইলে মানুষ বাঁচিবে না। তবে উপায়?