উপায় সর্ব্বযুগে যাহা ছিল এই যুগেও তাহাই,—মানুষকে বাঁচিতে হইলে জীবনেরই আরাধনা করিতে হইবে,—বৃহত্তর জীবনের। এক কথায়, প্রেমই সেই সঞ্জীবনী অমৃতবল্লরী। যুগে যুগে ইহাই মানুষকে বাঁচাইয়াছে; আত্মোৎসর্গ না করিয়া আত্মলাভ নাই। কিন্তু এ যুগে সে প্রেরণা আসিবে কোথা হইতে? প্রেমের নূতনতর ভিত্তিভূমি কি হইবে? ভগবানে আত্মসমর্পণ যে প্রেমের আদর্শ, সে প্রেমে আজ কেহ সাড়া দিবে না—আজিকার মানুষ অহৈতুকী প্রেমেরও হেতু জিজ্ঞাসা করে। খ্রীষ্টান বা বৈষ্ণব—কোন theology-তেই সে বিশ্বাস করে না; কোন তত্ত্ববাদ তাহাকে প্রেমিক করিয়া তুলিবে না। অথচ তাহাকে বাঁচিতে হইবে—মানুষের একমাত্র ধর্ম্ম যে প্রেম, তাহার দ্বারা মৃত্যুকে জয় করিতে হইবে।
সমগ্র ঊনবিংশ শতাব্দী ধরিয়া পৃথিবীময় মানবের নবজাগরণ হইয়াছিল—প্রাচীন সংস্কার জীর্ণ-নির্ম্মোকের মত মানুষের মন হইতে খসিয়া পড়িতেছিল। এক নূতন বুভুক্ষা এই নব জাগ্রত মানবসমাজকে অধীর করিয়া তুলিয়াছিল। এ বুভুক্ষার মূলে ছিল মানুষের অতি তীব্র মনুষ্যত্ব-চেতনা। এই বুভুক্ষা-প্রশমনকল্পে কত মনীষীর মনীষা ব্যর্থ হইল—কত পথ্যের ব্যবস্থা হইল, কিন্তু পাকপ্রণালী আবিষ্কৃত হইল না। সমাজে ও রাষ্ট্রে কত ভাঙা-গড়া, সমাজনীতি ও রাজনীতির কত নিত্য নূতন মতবাদ, শাস্ত্র ও গুরুবাদের পরিবর্ত্তে বিবেক বা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের জয়ধ্বজা, নবধর্ম্মতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা—এই ক্ষুধার কত লক্ষণই কত দিকে প্রকাশ পাইতে লাগিল; মানুষ যেন কস্তুরী-মৃগের মত নিজ নাভিগন্ধে দিশাহারা হইয়াছিল। যে ধর্ম্ম এতকাল সমাজকে ধরিয়া রাখিয়াছিল, তাহা আর যথেষ্ট নয়—তাহার উপর যে জোড়াতালি চলিতেছিল