তাহাতে এই ক্ষুধা আরও বিকৃত হইয়া পড়িতেছিল; মনুষ্যত্বের নামে ব্যক্তির আত্মপরায়ণতা প্রশ্রয় পাইয়া মহাবিনাশের পথ প্রস্তুত করিতেছিল।
এমনই কালে এই বাংলা দেশের জল মাটিতেই প্রেমের এক নূতন তত্ত্ব মূর্ত্তি পরিগ্রহ করিল। মানুষের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা—যে শ্রদ্ধা অতি অধমকেও আত্মবিশ্বাসী করিয়া তোলে—তাহাই হইল এই নব-মানবপ্রেমের আদি প্রেরণা।
বুদ্ধ যাহাকে অস্বীকার করিয়া মানুষকে নির্ব্বাণমুক্তির অভয়লাভ করিতে বলিয়াছেন, খ্রীষ্ট তাহাকেই সঞ্জীবিত করিয়া ক্ষমা ও তিতিক্ষার অনুশীলনে পাপমুক্তির আশ্বাস দিয়াছিলেন। চৈতন্য অহৈতুকী শুদ্ধা প্রীতির সাধনা করিতে বলিয়াছিলেন—কামকেই ইন্দ্রিয়লোক হইতে অতীন্দ্রিয়লোকে প্রতিষ্ঠিত করিয়া প্রেমের সন্ন্যাস প্রচার করিয়াছিলেন। কেহই মানুষকে বড় করেন নাই, মানুষের মনুষ্যত্বের দায়কে সাক্ষাৎভাবে তুচ্ছ করিতে শিখাইয়াছিলেন। উভয়েরই শিক্ষায় পাপবোধ ও প্রায়শ্চিত্তের প্রয়োজন বড় হইয়া আছে; মানুষ কেবলমাত্র মানুষহিসাবে অসৎ—সেই এক পরম সৎকে বিশ্বাস বা তাহার প্রতি অহৈতুকী প্রেমের দ্বারা শুচি হইতে পারিলে, তবে সে ভবভয় হইতে মুক্তি লাভ করিবে। কিন্তু এবার প্রেমের নূতন অর্থ হইল—মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা, জীবের মধ্যেই শিবের সাক্ষাৎকার। মুক্তির সবচেয়ে বড় আদর্শ হইল জীবন্মুক্তি—এই মানুষের সংসারে, জীবরূপেই যে শিবত্বের উপলব্ধি করিয়াছে —মুক্তিকেও যে তুচ্ছ করিয়াছে, সেই প্রকৃত মুক্ত।
শ্রীচৈতন্য ‘জীবে দয়া, নামে রুচি’ উপদেশ করিয়াছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ তাহাতেও সন্তুষ্ট নহেন। তিনি পৃথক ‘নামে রুচি’র